টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিন ও রাতে বোরজ থেকে পানি নিষ্কাশন করেও কিনারা করতে পারছেন না কৃষক। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হতাশায় দিন কাটছে তাদের। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পান চাষে জড়িত শত শত মালিক ও শ্রমিক সবাই বেকার হয়ে পড়বে। কৃষি বিভাগ বলছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হচ্ছে।
বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে পানের বরজের জলাবদ্ধতা চোখে পড়ে। সেচ প্রকল্প হওয়ার কারণে খুব দ্রম্নত সময়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বৃষ্টি আসলে পানি আবার বেড়ে যায়।
উপজেলার উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের পানচাষি আবু তাহের জানান, তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে পানের বরজ করেছেন। গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় দু'টি পানের বরজ। এখন শ্রমিক নিয়ে পানি নিষ্কাশন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। পানের বরজের ভবিষ্যৎ কি হবে তাও বলতে পারছে না।
একই গ্রামের হেনা আক্তার বলেন, গত ৬ মাস আগে আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১০ শতাংশের মধ্যে পানের বরজ করেছেন। পুরো পানের বরজ পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন কি করবেন তাও জানেন না।
পানচাষি সফিকুর রহমান বলেন, 'পান ও সুপারির আবাদ আমাদের উপজেলার ঐতিহ্য। আমার এক জমিতে পানের বরজ ছিল। তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমি কি করব জানি না। উপজেলার প্রায় ৭শ' কৃষকের এমন পরিস্থিতি হয়েছে।'
উত্তর আলগী ইউনিয়নের পানচাষি শাহজাহান ও শহীদুলস্নাহ ঠাহরদার বলেন, 'আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছি। বৃষ্টিতে আমাদের বরজ শেষ। পান গাছের গোড়া পচে গেছে। পানি গেলেও আর পান গাছ বাঁচবে না। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব বলতে পারছি না। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না।'
এদিকে পানের বরজগুলোতে পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার কারণে অপরিপক্ক পান বোরজ থেকে কর্তন করা হচ্ছে। এসব পান বিক্রির জন্য সাজানো হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও দোকানের সামনে।
আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের পান বেপারী কাদের গাজী বলেন, পান নির্দিষ্ট সময়ে বড় হলে বিক্রি করেন চাষিরা। কিন্তু দুর্যোগ মুহূর্তে এখন কিছুই করার নেই। বরজ থেকে কর্তন করে কোনো রকম বিক্রির জন্য বিড়া সাজানো হচ্ছে। আর না হয় জমিতে পচবে এসব পান। পান বড় হলে প্রতি বিড়া বিক্রি হতো ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সাইজে ছোট হওয়ায় এখন প্রতি বিড়া ৩০ থেকে ৫০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, উপজেলার ১১৯ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ আছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে প্রায় ১০০ হেক্টর জমির পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পান চাষের সঙ্গে জড়িত আছে ১ হাজার ৭২ জন কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ততের তালিকা তৈরি এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। কৃষকদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ সঠিক না। প্রণোদনা এলে এসব কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।