পানি বেড়ে ঝুঁকির মুখে ৫৭৩ কোটি টাকার কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় ডুবে যাওয়া রাস্তা -যাযাদি
চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দেশের উলেস্নখযোগ্য নদীগুলোতে বেড়েছে পানি। একই অবস্থা নবীগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন কুশিয়ারা নদীরও। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তীর উপচে পড়ায় পস্নাবিত হচ্ছে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বাঁধ বা কুশিয়ারা ডাইক। রাধাপুর গ্রামের নানু মিয়ার বাড়িসংলগ্ন স্থানে ডাইকে ব্যাপক ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। অপর অংশ দিয়ে ডাইকের ভেতরে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, পানি প্রবেশের ফলে বড় ধরনের ভাঙনে নবীগঞ্জের ৮ থেকে ৯টি ইউনিয়ন বন্যায় পস্নাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইউএনও অনুপম দাশ অনুপ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া জানান, কুশিয়ারা নদী উপচে তীরবর্তী গ্রামগুলো পস্নাবিত হয়েছে। ডাইকে ফাটলের পাশাপাশি একটি অংশে পানি ভেতরে ঢুকছে। স্থানীয়ভাবে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নদীর তীরবর্তী প্রায় ১০টি গ্রামে ঢুকছে নদীর পানি। অন্যান্য এলাকা থেকেও ডাইকে ফাটল ও পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ডাইক নির্মাণের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। প্রকল্পের ৫৭৩ কোটি টাকার কাজ নিয়ে গত সরকারের প্রভাবশালীরা নয়ছয় করেছেন। কাজ হয়েছে দায়সারা। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তের দাবিও করেছেন তারা। কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বাঁধটি নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি কাজ করা হয়েছে দায়সারাভাবে। অল্প সময়েই বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ভাঙন সৃষ্টিতে নির্মাণ কাজের দুর্বলতা দৃশ্যমান। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন হবিগঞ্জ জেলার ভাটি অঞ্চলের মানুষ। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের ফলে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের দুর্বলতা নজরে আসে। প্রতিরক্ষা বাঁধটির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থান দেবে গিয়ে বাঁধের গায়ে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় সংবাদ প্রকাশিত হলে দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শেরপুর এলাকার জুয়েল আহমদ বলেন, জনস্বার্থে প্রকল্প করা আর প্রকল্পের নামে অর্থলুটের ক্ষেত্র সৃষ্টি করা এক কথা নয়। কুশিয়ারা ডাইকের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে। এদিকে লামা তাজপুরের খোয়াজ উলস্নাহ ডাইক নির্মাণে অনিয়মের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিবাদ কার কাছে করতাম কে শুনত কথা রক্ষকই ভক্ষক হয়ে অর্ধ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে লুটপাট চালিয়েছে দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে। কথা বলতে গেলে মিথ্যা মামলায় শেষ করে দিত। আমরা ধৈর্য ধরেছি সময়ের অপেক্ষায়। সময় এসেছে, প্রকল্প লুটেরাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার।' নবীগঞ্জ উপজেলা সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী সেফু জানান, কুশিয়ারা ডাইক নির্মাণ কাজে প্রকাশ্যে অনিয়ম হয়েছে। মানুষের টাকা লুট করা হয়েছে। এই প্রকল্পের সব হিসাব আদায় করার পাশাপাশি প্রমাণসাপেক্ষে দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, 'কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ কয়েকটি প্যাকেজের মাধ্যমে চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো মূলত নদী ভাঙন রোধে করা হচ্ছে। এটা ভালো অবস্থায় আছে।' তবে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দুই বছর ধরে সাংবাদিকরা শুধু অনিয়মের কথা বলে যাচ্ছেন। কোথাও সমস্যা হয়নি। আমরা কোনো অনিয়ম পাইনি। চলমান কাজ নিয়মিত তদারক করা হচ্ছে।'