কেউ সরাচ্ছেন গোয়ালের গরু, কেউ ফার্নিচার, আবার কেউবা বাড়িঘর ছাড়ছেন। নড়াইল পৌরসভার দুর্গাপুর-আলাদাপুর, মহিষখোলা কুড়িগ্রাম এলাকার চিত্র এটি। একই চিত্র শহরের ভওয়াখালী, ভাদুলিডাঙ্গা, বাহিরডাঙ্গা, ভাটিয়া, বরাশুলার।
গত রোববার রাতের টানা ৩ ঘণ্টা বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে পুরো নড়াইল পৌরসভা। রাত দুইটা থেকে অধিকাংশ নিচু এলাকার মানুষের ঘরের মধ্যে পানি ঢুকতে শুরু করে। সারারাত জেগে ঘরের পানি সরিয়ে ফার্নিচার রক্ষায় ব্যস্ত নগর জীবনের মানুষরা। সকাল থেকে অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। অপেক্ষাকৃত উঁচু অঞ্চলের পানি স্রোতের মতো নামতে থাকে নীচের দিকে। সকালে অনেকে বাড়ি ছাড়ছেন আশ্রয়ের আশায়। কেউবা মূল্যবান আসবাব সরাতে ব্যস্ত। চরম ভোগান্তি পুরো এলাকা জুড়ে।
পানি উঠেছে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ঘরবাড়িতেও। অধিকাংশ রাস্তায় গোড়ালি, আবার কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী।
সোমবার সকালে পৌর এলাকার মহিষখোলা, আলাদাতপুর, দুর্গাপুর, ভওয়াখালী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার অনেক স্থানে ঘরবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও রাস্তায় পানি জমেছে। জলাবদ্ধতায় অনেক সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘরের সামনে পানি জমায় অনেকে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। কারও কারও রান্নাঘর-টিউবওয়েলের কিছু অংশ ডুবে গেছে পানির নিচে। পুরাতন পাসপোর্ট সড়ক, আনসার-ভিডিপি সড়ক, প্রেস ক্লাব-ভওয়াখালী সড়ক, বাহিরডাঙ্গা সড়ক দুই থেকে ৩ ফুট পানির নীচে। আলাদাতপুর এলাকার বাবু মোল্যার বাড়ি একেবারে পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবু মোল্যা বলেন, 'আমাদের বাড়ির নিচতলায় হাঁটুপানি জমেছে। টিউবওয়েলের কিছু অংশ পানিতে ডুবেছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছি আমরা। এদিকে রান্নাঘরেও পানি প্রবেশ করায় সকালের রান্নাও বন্ধ।'
এলাকার আমজাদ শেখ পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য। গৃহবধূ আসমা বেগম বলেন, রাতভর ফার্নিচার সরেয়েছি। সকালে কিছু খাইনি। এমনকি পয়ঃনিষ্কাশনেরও উপায় নেই। এখন আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছি।' হাঁটুপানি জমেছে ভাদুলিডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আসিস বিশ্বাসের বাড়ির চারপাশে। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নেমেছে, এরপর গতকাল রাতভর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাদের ঘরে পানি উঠে গেছে। বাড়ির চারপাশে হাঁটুপানি জমে আছে।
দুর্গাপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক আল আমিন বলেন, '৪০ বছরের বেশি সময় ধরে টানা ২-৩ দিনের বৃষ্টিতেও কখনো উঠানে পানি আসেনি। রেল লাইনের রাস্তার বাঁধের কারণে আমাদের ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকছে। অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি নির্মাণের ফলে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।'
নড়াইল পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ সালে ২৮ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয় পৌরসভাটি। ১৯৯৯ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। শহরটির জন্য ৫৫ কিলোমিটার নালা ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ৩ কিলোমিটার, তাও আবার রয়েছে অপরিকল্পিত।
নড়াইলের পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, যুগ যুগ ধরে নাগরিকের এই দুর্ভোগ ও জলাবদ্ধতা নিরসন করতে কোনো উদ্যোগই নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। তারা বড় প্রকল্প তৈরি করেই টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যস্ত। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার উদ্যোগ এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ওহাবুল আলম বলেন, প্রতিবছর পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হয়। এ বছরও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পানি সরাতে কাজ করা হয়েছে। যে পরিমাণ ড্রেন দরকার তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পৌরসভার হাতে নেই।