বিলীন হচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি, বসতঘর রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
পদ্মার তীব্র স্রোতে বিলীন হচ্ছে জনপদ
প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
গত কয়েকদিন কমলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে পদ্মা নদীর পানি। এর ফলে তীব্র স্রোতে বিলীন হচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি, বসতঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা। বসতভিটাসহ স্কুল তলিয়ে যেতে পারে, সেই আশঙ্কায় দিন কাটছে নদীপারের মানুষের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মা নদীতে পানির তীব্র স্রোতে দুর্গম চরাঞ্চল আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হচ্ছে বলে জানা গেছে। আজিমনগর ইউনিয়নের হাতিঘাটা এলাকা থেকে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এরিয়ায় এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে লেছড়াগঞ্জের লটাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছয় রুম বিশিষ্ট কোটি টাকার একতলা ভবন পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এতে আবার নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন তিনটি সম্পূর্ণরূপে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সত্তর দশকের শেষের দিকে চর জেগে উঠলে তিনটি ইউনিয়নে আবার জনবসতি শুরু হয়। বর্তমানে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক মানুষের বসবাস। তবে এখনও ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে বসবাস করছেন চরাঞ্চলের জনগণ।
চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে আজিমনগরের হাতিঘাটা এলাকা থেকে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুর পর্যন্ত ভাঙন দেখা দেয়, যা বর্তমানে তীব্র আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, হাতিঘাটা এলাকায় অনেক জায়গা জিও ব্যাগ থাকলেও তা ধসে নদীর তীরের মাটি বের হয়ে আসছে। তাই নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে এ এলাকার শত শত পরিবার। এছাড়াও ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে সুয়াখাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, হাতিঘাটা বাজার, বসতভিটাসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি।
আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের নাসির উদ্দীন জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যা এখনো অব্যাহত আছে। কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেললেও জিওব্যাগসহ ধসে যাচ্ছে নদীর তীর। একের পর এক কৃষি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙলে চরাঞ্চল টিকে থাকাই কষ্টকর।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোতালেব হোসেন জানান, তীব্র স্রোতে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে চরাঞ্চলের ফসলি জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। চলতি বর্ষায় প্রায় ১ কিলোমিটারের অধিক জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার ওয়ার্ডের অনেকের ভিটেবাড়ি ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীতে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ভাঙছে। এভাবে ভাঙলে হয়তো চরই থাকবে না। অনেক কৃষক জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দীন জানান, 'চরাঞ্চলে আমরা গত তিন বছরে কয়েকটি এলাকায় জিওব্যাগ ফেলেছি। আবারও মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।'
চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর চারঘাটে ভারি বর্ষণে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যেতে পারে দুটি প্রাইমারি স্কুলসহ কয়েকটি গ্রাম। কংক্রিট নিরাপত্তা বাঁধ না থাকায় হুমকিতে কয়েক হাজার বশত ভিটাসহ টাঙ্গন সরকারি প্রাইমারি স্কুল ও পিরোজপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল। বাঁধ না থাকায় বছরের পর বছর ভাঙনের ফলে হুমকির মধ্যে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসতভিটা। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে স্কুল ভবনগুলো ও বসতভিটা।
উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলায় প্রায় ২২ কিলোমিটার পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকা রয়েছে। নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোর মধ্যে ইউসুফপুর, মোক্তারপুর, টাঙ্গন, কুঠিপাড়া, থানাপাড়া, গোপালপুর, চন্দনশহর, পিরোজপুর ও রাওথা অন্যতম। এরমধ্যে পুলিশ একাডেমি সংলগ্ন এলাকা, মোক্তারপুর ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন এলাকা, ইউসুফপুর কলেজ সংলগ্ন এলাকা ও টাঙ্গনের কিছু এলাকায় বাঁধ রয়েছে। তবে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইউসুফপুর ইউনিয়েনের টাঙ্গন মধ্যপাড়া, পৌরসভার মোক্তারপুর, গোপালপুর, পিরোজপুর ও চারঘাট ইউনিয়নের রাওথার কিছু অঞ্চলের মাটি দিয়ে দেওয়া বাঁধের অবস্থা খুবই বিপজ্জনক।
স্কুল ভবন রক্ষার্থে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন আশ্বাস দেয়। তবে এখনও কোনো কাজ শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন টাঙ্গন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাখিসা বানু। জেলা শিক্ষা অফিস প্রতিনিধিসহ ইতিমধ্যে স্কুল সংলগ্ন বাঁধ পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
পাউবি, রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ৪শ' মিটার নিরাপত্তা বাঁধ পুনর্বাসন প্রকল্পে পুরাতন বস্নক তোলা হয়েছিল। আকস্মিকভাবে পানি বেড়ে যাওয়া আবারও পুরাতন বস্নকসহ জিওব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে বন্যার পানি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।