চট্টগ্রামের রাউজান ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় বন্যাবিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ এবং রাস্তা এখন সংস্কার কাজ হচ্ছে স্বেচ্ছাশ্রমে। তবে বন্যার পানি কমা শুরু করলেও এখনো দুর্ভোগে রয়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। দ্রম্নত পানি নিষ্কাসন, কৃষি ও বাসস্থান পুনর্বাসনের দাবি এসব বানভাসি মানুষের। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিগত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর বর্ধিত জোয়ারের পানির সঙ্গে পার্বত্যাঞ্চল থেকে প্রবল স্রোতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তীব্রতায় রাউজানের বিভিন্ন ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ধসে দিয়েছে। গত রোববার বিকাল থেকে লোকালয়ের পানি নেমে যেতে থাকলে একের পর এক ভেসে উঠছে রাস্তাঘাটের বিধ্বস্ত রূপ।
সরেজমিন পরিদর্শনে ঘুরে দেখা যায়- নদী ও খাল পাড়ের সঙ্গে থাকা ইউনিয়নগুলোর বেশিরভাগ রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্রোতের তীব্রতায় ছিন্নভিন্ন হয়েছে পাকা ও কাঁচা সড়ক। বহু রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো বিধ্বস্ত রাস্তায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো বসিয়ে পারাপার করছে। কেউ মাটি কেটে ভরাট করার মাধ্যমে চলাচল উপযোগী করছে। পানির স্রোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে উপজেলার নোয়াজিশপুর, চিকদাইর, ডাবুয়া, নোয়াপাড়া, উরকিরচর, পশ্চিম গুজরা, পূর্ব গুজরা, রাউজান সদর ইউনিয়নে। গ্রামীণ রাস্তার মতো বিভিন্ন স্থানে বিধ্বস্ত হয়েছে আন্তঃউপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়কগুলোও। এসব সড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাউজান-কাগতিয়া-নোয়াপাড়া সড়ক। কয়েকটি স্থানে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া এই সড়ক পথে যানবাহন চলাচল করছে এখন ঝুঁকি নিয়ে। পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাই খালের উত্তর পাশে থাকা ডা. রাজা মিয়া সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার স্থানীয়রা বিধ্বস্ত সড়কটি চলাচল উপযোগী করতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।
গ্রামের সমাজসেবক মোহাম্মদ লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন, পাড়ার ছেলেরা বিধ্বস্ত সড়ক চলাচল উপযোগী করতে কোনো জায়গায় মাটি দিয়ে বাঁশের সাঁকো বসিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত আরসিসি ঢালাই করা বিধ্বস্ত সড়কে বালি কংক্রিট সিমেন্ট মিক্সিং করে সংস্কার করছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেকেই অভিযোগ করেছেন বিগত সময়ে রাস্তার উন্নয়ন কাজে যারা জড়িত ছিলেন তারা নয়ছয় করে কাজ শেষ করায় রাস্তাগুলো এমন অবস্থা হয়েছে।
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, অবশেষে খুলনার পাইকগাছার দেলুটী কালিনগরের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। ৫ম দিন গত সোমবার ৫ হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বাঁধ মেরামত করেন। এদিকে টানা ৫ দিন পানিবন্দি থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন দুর্গত মানুষ। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত নৌযান না থাকায় দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে ভোগান্তিতে পড়ছেন ত্রাণ বিতরণকারীরা। গবাদি পশু ও শিশুদের নিয়ে ওয়াপদার রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে শত শত পরিবার। দ্রম্নত পানি নিষ্কাসনসহ বাসস্থান নির্মাণে সরকারি-বেসরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ।
উলেস্নখ্য, গত ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার উপজেলার দেলুটী ইউনিয়নের কালিনগর এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে ২২নং পোল্ডারের ১৩টি গ্রাম পস্নাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ১৫ হাজার মানুষ। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করলেও জোয়ারের পানিতে বাঁধটি ভেসে যাওয়ায় সব চেষ্টা বিফলে যায়। অবশেষে সোমবার দেলুটী ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল ও সোলাদানার সাবেক চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হকের নেতৃত্বে ৫ হাজার মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে বাঁধ মেরামত সম্পন্ন করেন।
নোয়াই গ্রামের করবী মন্ডল জানান, 'আমাদের বেশিরভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এখন থাকার জন্য পর্যাপ্ত তাঁবু প্রয়োজন।' শিশু সন্তানদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বলে জানান হরিণখোলা গ্রামের সাধনা গোলদার। রুমি মন্ডল জানান, 'বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে ছিলাম। নৌবাহিনী তাঁবু স্থাপন করে দেওয়ায় পরিবার নিয়ে জীবন ধারণ করছি।' 'হৃদয়ে পাইকগাছা' সংগঠনের রইচ উদ্দীন বলেন, বিগরদানা থেকে দারুণমলিস্নক পর্যন্ত একটি মাত্র রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে ত্রাণের গাড়ি চলাচল সহজ নয়। পাশাপাশি দুর্গত এলাকার মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত নৌযান নেই। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ত্রাণ বিতরণকারীদের।
ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল বলেন, বাঁধ মেরামত হলেও পরবর্তী দ্রম্নত পানি নিষ্কাসন, কৃষি ও বাসস্থান পুনর্বাসন জরুরি।