ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে শিশুরা

থানচির মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকট

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানের থানচিতে খাদ্য সংকটে ভাতের পরিবর্তে বাঁশ কোড়ল খাচ্ছেন দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা -যাযাদি
বান্দরবানের থানছির মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দুর্গম গ্রামাঞ্চলে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে খাচ্ছেন বাঁশ কোড়ল (বড় বাঁশের গোড়ায় জন্মানো কচি বাঁশ)। এদিকে বড়রা বাঁশ কোড়ল খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারলেও এসব খাবার খেতে পারছে না ছোট শিশুরা। ফলে ক্ষিধার জ্বালায় কাঁদছে শিশুরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১ নম্বর রেমাক্রী ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বুলু পাড়া, য়ংডং পাড়া, মেনহাক ম্রো পাড়া, তাংখোয়াইসহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বাজারে আসতে পারছেন না তারা। তাদের ঘরে নেই চাল, ডালসহ রান্নার প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ফলে চরম খাদ্র সংকটে পড়ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রতিদিন জঙ্গলে বাঁশ কোড়ল খুঁজে সিদ্ধ করে কোনোরকম খেয়ে বেঁচে আছেন তারা। এদিকে খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথম ধাপে ওইসব এলাকার মানুষের জন্য এক মেট্রিকটন চাল পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, গত বছর জুমগুলোতে আশানুরূপ ফলন ভালো হলেও অতিমাত্রার বৃষ্টির কারণে মাটিতে মিশে নষ্ট হয়েছে জুমের ধান। এতে অনেকে জুমের নতুন ধান ঘরে তুলতে পারেননি। এ ছাড়া ভয়াবহ বন্যার কারণে নির্দিষ্ট সময় জুমে পৌঁছাতে না পারায় নষ্ট হয়ে যায় ফসল। ফলে সারা বছরের জন্য ধান মজুদ করতে না পারায় দেখা দিয়েছে এ খাদ্য সংকট। বুলু পাড়ার বুলু কারবারি জানান, 'জুমের ধানও পাকেনি। ঘরে ধান, চাল, ডালসহ রান্না করে খাবার মতো কিছু নেই। তাই আমাদের একমাত্র ভরসা এখন বাঁশ কোড়ল। আমরা বড়রা বাঁশ কোড়ল সিদ্ধ করে কোনোরকম খেয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু শিশুরা এ খাবার খেতে পারে না। তাই তারা ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে প্রতিদিন।' মেনহাত ম্রো জানান, 'জুমের ধান এখনো পাকেনি। গ্রামের আশপাশে বাজারও নাই, হাতে টাকাও নাই। ক্ষুধার জ্বালায় শিশুদের কান্না আর সহ্য করতে পারছি না। তাই কাঁচা ধান কেটে এনে চুলায় শুকাচ্ছি। ধান থেকে চাল বের করে বাঁশ কোড়লের সঙ্গে মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছি। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নাই।' আদাপাড়ার বাসিন্দা ঙৈলিং ম্রো জানান, 'আমাদের এলাকার প্রায় ৬৪টি পরিবার। তিন মাস আগে থেকেই আমরা বাঁশ কোড়ল খেয়ে বেঁচে আছি। দুর্গম এলাকা বলে আমাদের খবর কেউ নেয় না।' থানছি উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো জানান, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় ম্র্রো এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করে। এলাকাটি বাংলাদেশের শেষ সীমান্তে অবস্থিত। থানছি সদরের সঙ্গে ওই এলাকার একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির স্র্রোত থাকায় সহজে তারা বাজারে আসতে পারে না। ফলে প্রায় প্রতি বছরই ওই এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। থানছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন জানান, 'এ উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নটা অত্যন্ত দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা। সেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্কও নাই। ওই এলাকায় বেশ কিছু গ্রামে চরম খাদ্য সংকট চলছে আমরা জেনেছি। রোববার দুইটি নৌকায় করে ১ মেট্রিকটন চাল আমরা পাঠিয়েছি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে আরও চাল পাঠানোর ব্যবস্থা করব।'