বন্যার ধাক্কা পণ্য পরিবহণে

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় বিভিন্ন জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের সঙ্গে তলিয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও। কিছু জায়গায় কোমর সমান পানি হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটছে গাড়িতেই, সারি সারি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আটকে পড়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পণ্য পরিবহণে; প্রধান সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য আনা ও পাঠানো একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েকদিনে বন্যার পানিতে কুমিলস্নার নবগ্রাম রাস্তার মাথা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে যায়। একই সময়ে ফেনীর লালপুল এলাকায় অন্তত ৫ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে যায়। এদিকে, পোশাক খাতে গড়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়, যার বেশিরভাগই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। কিন্তু বন্দরনগরীর পথে মহাসড়কে বন্যার পানির কারণে পণ্য পরিবহণ স্থবির হয়ে পড়েছে। দুদিন ধরে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। শনিবার সকাল থেকে মহাসড়কে পানি কিছুটা কমার পর যানবাহন চলাচল বাড়লে ব্যাপক জটে সড়কে থাকতেই হচ্ছে দীর্ঘ সময়। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম বলেন, 'শুক্রবার আমাদের তো বিপদেরই দিন ছিল। ক্ষতি তো হয়েই গেল, কী আর করা বলেন। প্রচুর কারখানার পণ্য কুমিলস্নায় গিয়ে আটকে ছিল।' ফতুলস্না অ্যাপারেলসের স্বত্বাধিকারী শামীম বলেন, 'শনিবার সকাল থেকে পানি নামতে শুরু করলে পণ্য সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে পানির কারণে আটকে থাকা যান ছাড়ায় এখন প্রচুর জ্যাম ছিল।' বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে প্রথমে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ফেনীতে রেললাইন পানির নিচে থাকায় এখনও চট্টগ্রামের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্দরমুখী কার্গো ট্রেনও বন্ধ। রেলওয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) নাহিদ হাসান খান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ফেনীতে রেললাইন পানির নিচে থাকায় এখনও চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পণ্য পরিবহণে সড়ক ও রেলপথে বিপত্তির কারণে বিমানের ব্যবহারও হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস খাতে। এতে বাড়তি খরচের মুখে পড়তে হচ্ছে। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান পুলক বলেন, 'বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় আমাদের। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা অনেক গাড়ি মাঝ রাস্তায় আটকা পড়ে পানির কারণে। পরে অনেক পার্সেল বাড়তি খরচ দিয়ে বিমানে পাঠাতে হয়েছে।' কুমিলস্না পর্যন্ত কুরিয়ার সার্ভিস স্বাভাবিক ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিমানের তো লোড শিপমেন্ট কম। সব পণ্য পাঠাতে পারিনি। দিনে আমাদের বাড়তি এক লাখ টাকা খরচ বেড়েছে।' কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (সিএসএবি) সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা কেবল পণ্য পরিবহণ নয়, ত্রাণ সেবাও দিচ্ছি। আমাদের ত্রাণ কুমিলস্নার ময়নামতিতে পাঠাচ্ছি, সেখান থেকে সেনাবাহিনী ত্রাণ বানভাসিদের পৌঁছে দিচ্ছে।' বন্যার পানি কমতে শুরু করায় শনিবার রাত থেকে পুরোদমে পণ্য পরিবহণের প্রত্যাশা করছেন হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, 'আমাদের যেহেতু লোকবল ও যান বেশি, অন্য প্রতিষ্ঠানদেরও বলেছি তাদের কোনো দরকারে যোগাযোগ করতে।' উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় কয়েক দিনে ডুবেছে ফেনী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্ণীপুর ও কক্সবাজার। এর মধ্যে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ফেনীতে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বলছে, দেশের চলমান বন্যার কারণে ৪৬২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সড়কের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পেতে আরও সময় লাগবে। দরকার পড়বে সড়ক মেরামতের। এরপর পণ্য পরিবহণ পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিকরুল হাসান বলেন, 'এখন পর্যন্ত যেটা পাওয়া গেছে, সেগুলো প্রাথমিক তথ্য। পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাওয়া যাবে। এটা খুবই প্রাথমিক প্রতিবেদন। বন্যার কারণে এখনও অনেক জায়গার চিত্র যাওয়া যাচ্ছে না। পানি সরে গেলে আমরা লোক পাঠাব, তখন প্রকৃত অবস্থাটা বোঝা যাবে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তথ্যগুলো আমরা সমন্বিত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছি। আর পানি সরে গেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত শুরু করব।' ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে ১০ কিলোমিটার অংশ এখনও পানির নিচে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এদিকে বন্যার পানি কারখানায় ঢুকে পড়ায় ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান বিকেএমইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান। তিনি বলেন, 'ফেনীতে আমার বন্ধুর রপ্তানিমুখী টাওয়েল কারখানায় পানি ঢুকে গেছে। তার মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন ও সংরক্ষণ সবকিছু ব্যাহত হয়ে গেছে পুরো।'