যশোরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
দেশের ১২টি জেলায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নেমেছে যশোরবাসী। অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহে যেন চলছে রুদ্ধশ্বাস প্রতিযোগিতা। যশোরের জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক পেশাজীবী সংগঠন নিজ নিজ অবস্থান থেকে ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আর সর্বস্তরের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এই কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। সরেজমিনে যশোর শহরে ঘুরে দেখা গেছে, রিকশায় মাইক বেঁধে বিভিন্ন মানবিক ও কালজয়ী গান গেয়ে শহরে ঘুরে ঘুরে অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর। শনিবার সকালে চৌরাস্তা মোড় থেকে এই ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে ৩০টির বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পী সদস্যরা অংশ নেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সি পেশার মানুষের নিয়ে গঠিত 'বন্যার্তদের পাশে যশোর' তারাও রিকশা ইজিবাইকে ঘুরে ঘুরে অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করছেন। ছোট ছোট বাক্স নিয়ে ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর, উন্নত মম শির, প্রেস ক্লাবের সামনে গত দুই দিন ধরে অপটিলাক্স বিডি নামে একটি সংগঠন ত্রাণ সংগ্রহ করেছে। ঈদগাহ মোড়ে গান গেয়ে ত্রাণ সংগ্রহ অভিযান শুরু করে উদীচী যশোর। দড়াটানায় প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত বিবেক স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা অস্থায়ী বুথ স্থাপন করেছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আহ্বান, ঐক্য বন্ধন, বৈষম্যবিরোধী কারামুক্তি আন্দোলন, সামাজিক সচেতন সংস্থা, জাগ্রত যশোর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড যশোর, গ্রান্ড দরবার, ৯৩ ফাউন্ডেশন, উদীচী, ইমাম পরিষদ যশোরসহ বিভিন্ন সংগঠন। ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন মসজিদে মসজিদেও। এছাড়া বন্যার্তদের ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে যশোরের ব্যতিক্রমী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থাও। এদিকে বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন যশোর ও সদর উপজেলা প্রশাসন। শনিবার থেকে ঐতিহ্যবাহী যশোর কালেক্টরেট ভবনের নিচ তলায় ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারে কার্যালয়েও ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের কাজ চলছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন। এ কার্যক্রমে বাদ যায়নি জেলার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ইউটিউবের বস্নগাররাও। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যানারে নিজেদের মতো করে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ ও অর্থ সংগ্রহে নেমেছেন। কেউ ছোট ছোট বাক্স নিয়ে ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করছেন। কেউ বুথ বসিয়ে সংগ্রহ করছেন ত্রাণ ও নগদ অর্থ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় অর্ধশতাধিক সংগঠন গত দুইদিন ত্রাণ ও অর্থ সংগ্রহের কাজে নেমেছেন। সবারই লক্ষ্য একটাই, বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। জেলাটিতে সব জায়গায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দানের হাত বাড়িয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যে ট্রাক ভরে গেছে নানা ধরনের জিনিসপত্রে। গত দুই দিনে জোগাড় হয়েছে লাখ লাখ টাকা, যা মানুষকে অবাক করেছে। এটি দেখে অনেকেই খুশি। যশোরে ত্রাণ সংগ্রহের খবরে যশোরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আপুস্নত হয়েছেন। অনেকের বক্তব্য, মানুষ যেভাবে সহানুভূতির হাত বাড়িয়েছে সেটি অভূতপূর্ব। এভাবে সবাই এগিয়ে আসলে বন্যা দুর্গত মানুষ সাহস পাবেন। আবারও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, বানভাসিদের জন্য যশোরের আট উপজেলায় শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। গত দুই দিনে তিন ট্রাকের মতো ত্রাণসামগ্রী পাওয়া গেছে। এছাড়া নগদ অর্থও পাওয়া গেছে। এগুলো প্যাকেট করে আমরা বন্যা দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।' মৈত্রী ভলান্টিয়ার্স যশোরের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, 'দেশের যেকোনো দুর্যোগে মৈত্রী ভলান্টিয়ার্স কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের বন্যাতেও কাজ করছে। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যে যা পারছে, সাহয্য করছে। 'বন্যার্তদের পাশে যশোর' সংগঠনটির সমন্বয়ক কামরুল হাসান রিপন বলেন, 'শুক্রবার ও শনিবার মিলে ৩ লক্ষাধিক নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। এছাড়া জামা-কাপড়সহ বিভিন্ন শুকনা খাবার তিন ট্রাকের মতো। যশোরবাসী অনেক মানবিক। আমরা যার দরজায় বা কাছে যাচ্ছি, কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছেন না। আমরা যা সংগ্রহ করেছি, তা দ্রম্নত বানভাসিদের কাছে পৌঁছে দিব।' নিজেদের সংগঠনের সদস্য, বিভিন্ন দানশীল মানুষের দেওয়া অর্থ দিয়ে বন্যার্ত মানুষের ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে শহরের খড়কিস্থ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, 'আমি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম বানভাসিদের পাশে দাঁড়াতে। তার পর আমার বন্ধু, সুহৃদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষরা সরাসরি বা কারো মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে আমাদের কাছে। এরপর নিজেদের সদস্যদের ছেলে-মেয়েরা সেটি প্যাকেট করে ভলান্টিয়ার্স টিম গঠন করে বন্যা কবলিত মানুষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই বন্যা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে বন্ধন সেটা আরো সুদৃঢ় হলো।'