পদত্যাগের প্রভাব

বহুমুখী সংকটে শাবিতে স্থবিরতা

সেশনজটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা,বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন নিরাপত্তাকর্মীদের, নিরাপত্তাহীনতায় আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

মাহাবুবুর রহমান, শাবি প্রতিনিধি
গত পাঁচ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়। এর প্রভাব পড়ে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল অনেকেই পদত্যাগ করেন। কিন্তু পদগুলোতে নতুন করে লোকবল নিয়োগ হয়নি। ফলে স্থবিরতা বিরাজ করছে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে। গত ১০ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) বহুল আলোচিত উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, হলপ্রাধ্যক্ষ, দপ্তর প্রধান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা পদত্যাগ করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংকট। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রত্যয়স্কিম ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সব রকম ক্লাস-পরীক্ষা। এতে দেখা দিয়েছে সেশনজটের শঙ্কা। এদিকে, উপাচার্য না থাকায় সিন্ডিকেট বৈঠক করে ক্লাস-পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাচ্ছে না। কোষাধ্যক্ষ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না বলে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন অনেক নিরাপত্তাকর্মী। অন্যদিকে প্রক্টর-প্রভোস্ট বডির অনুপস্থিতিতে ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হলগুলোতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়েছে বহিরাগতদের পদচারণা। এর মধ্যে আবাসিক হলগুলোতে মোটর সাইকেলযোগে মহড়া দিতেও দেখা যায় দুর্বৃত্তদের। এতে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অনেক শিক্ষার্থী জানান। এ ছাড়া বিদেশে উচ্চ শিক্ষার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ উত্তোলন করতে পারছেন না অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজ আহম্মেদ তূর্য বলেন, 'অনেকে দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য যে কাগজপত্রের বিষয়াদি ছিল, সেগুলা করতে পারছে না বলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছেন। আর এই প্রতিযোগিতার যুগে একটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়া মানে পুরোপুরি অনিশ্চয়তার দিকে পা দেওয়া। আমাদের একটি টিম নতুন গবেষণার ক্ষেত্রে যে বরাদ্দ ছিল, সেটা পাব কিনা, অনেকটাই অনিশ্চিত। আমার আশা থাকবে, যতদ্রম্নত সম্ভব প্রশাসন নিয়োগ করে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করা এবং সেশনজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, 'দুই মাস যাবত বেতন না পাওয়ায় কষ্টে দিনাতিপাত করতেছি। আমাদের দেখার কেউ নাই। ধার করে চলতেছি। সেই টাকাও এখন শেষের পথে।' চলমান সংকটে নিরসনে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, 'দ্রম্নত ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার জন্য প্রশাসন নিয়োগ দেওয়া জরুরি। যারা দায়িত্বে আসবেন, তারা সিন্ডিকেট মিটিং করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।' তিনি আরও বলেন, 'করোনাকালীন যে প্রভাব পড়েছিল, তা শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবার প্রচেষ্টায় অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। আবারও বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে সবার প্রচেষ্টায় সেশনজট মোকাবিলা করা যাবে।'