মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স

বন্যার পানিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম ওষুধ নষ্ট, বিশেষ ব্যবস্থায় সেবা

মো. বেলাল হোসাইন, চৌদ্দগ্রাম থেকে
  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া চিকিৎসা সরঞ্জাম -যাযাদি

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা পস্নাবিত হয়েছে। বন্যার পানি থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলাবাসীর একমাত্র স্বাস্থ্যসেবার ঠিকানা চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। পানিতে এক্স-রে মেশিন ও ওষুধসহ হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। তবে থেমে নেই সেবা প্রদান। বিশেষ ব্যবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

গত সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের ভেতরে পানি প্রবেশ করলেও বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা সেবা চালু ছিল। কিন্তু বুধবার রাতের প্রবল বর্ষণ ও বজ্রবৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের উজানের পানির চাপ বেড়ে গেলে দোতলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটির নিচতলা সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। এতে করে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্টাফ কোয়ার্টারের নিচতলায় পানি ওঠে। গভীর রাতে পানিবন্দি হয়ে পড়েন রোগী, ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাত যতই গভীর হচ্ছিল, পানি ততই বেড়ে চলছিল। বাঁচার আকুতি জানিয়ে ডাক্তার ও হাসপাতালের রোগীদের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। পানি যখন হাসপাতালটির নিচতলা পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে দোতলায় থাকা রোগীদের মধ্যে আরও আতঙ্ক বেড়ে যায়।

রোববার সরেজমিন দেখা যায়, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটির সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন এক্স-রে মেশিন, ইপিআই টিকাদান স্টোররুম, হাসপাতালের নিজস্ব সার্ভার, ওষুধের স্টোর রুম ও ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পানিতে নষ্ট হওয়া আসবাবপত্রগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একে একে বের করে আনছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগ যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তারপরও বন্যায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালটির একদল চিকিৎসক। হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

হাসপাতালের সিনিয়র নার্স খালেদা আক্তার বুধবার রাতকে বিভীষিকাময় তুলনা করে বলেন, এমন ঝড় বৃষ্টি এবং পানির পরিমাণ আমি কখনো দেখিনি। আমি বিগত ১৭ বছর এ হাসপাতালে চাকরি করে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো পড়িনি। বুধবার রাত যখন পানি বেড়েই চলছে হাসপাতালে রোগী ও ডাক্তাররা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। হাসপাতালের নিচতলা সম্পূর্ণ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। হাসপাতালের ওষুধপত্রসহ সব মালামাল পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। তারপরও ধ্বংসস্তূপের নিচে দাঁড়িয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাক্তার হাসান মাহমুদ পাটোয়ারী বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সামগ্রী দ্রম্নত না পেলে অনেক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম থেকে সেবাগ্রহীতারা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, অতীতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু হাসপাতালের মূল ভবনের ভেতরে পানি প্রবেশ করেনি। হাসপাতালের সামনের ড্রেনগুলো অবৈধ দখলদাররা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই হাসপাতালে পানি প্রবেশ করে। গত সপ্তাহের সোমবার থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে পানি প্রবেশ করলেও বুধবার রাতের প্রবল বর্ষণে হাসপাতালটির নিচতলা পরিপূর্ণভাবে পস্নাবিত হয়। এতে করে হাসপাতালের ওষুধ, বিভিন্ন মেশিনসহ সব মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচে দাঁড়িয়ে বন্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে