খুলনার দাকোপে ভরা মৌসুমেও স্থানীয় বিভিন্ন নদীতে দেখা মিলছে না দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের। এতে একদিকে এলাকার জনসাধারণ রূপালী ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছেন, আবার অন্যদিকে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন উপজেলার হাজারো জেলে পরিবার।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পৃথক ৩টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এ উপজেলা। এর চারপাশে নদী দিয়ে পরিবেষ্টিত। এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ এক সময় মৎস্য আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর এ মৎস্য আহরণের অভয়ারণ্য ছিল উপজেলার উলেস্নখযোগ্য ঢাকী, ভদ্রা, শিবসা, কাজীবাছা, মাঙ্গা, পশুর ও ঝপঝপিয়া নদী। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকার প্রায় হাজারো জেলে পরিবার এই পেশার উপর নির্ভরশীল। এসব জেলে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও মহাজনের দাদন নিয়ে জাল নৌকা কিনে অনেকে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু দিনরাত নদীতে জাল ফেলেও ইলিশ না পেয়ে তারা নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এমনকি ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না এসব জেলে। যে কারণে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারেও ক্রেতাদের সঙ্গে ইলিশের দেখা মিলছে খুব কম।
মাঝে মধ্যে দুই একজন জেলের জালে দুই একটি মাছ ধরা পড়লেও বাজারে তার দাম অনেক বেশি, যা সাধারণ মানুষ কিনে খেতে পারছেন না। এনজিও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাদের সঙ্গে প্রায়ই বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন জেলেরা। মাঝে মধ্যে আবার আত্মগোপন করেও থাকতে হচ্ছে অনেক জেলেকে। অন্য কোনো আয়ের উৎস্য না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে উপজেলার এসব জেলে পরিবারগুলো। জেলেদের পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছেন। এতে জেলেরা অর্থ কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
আবার সাধারণ মানুষও রূপালী ইলিশ মাছের স্বাদ প্রায় ভুলতে বসেছেন। এদিকে দীর্ঘদিন ইলিশের দেখা না পেয়ে ইতোমধ্যে এ পেশা ছেড়ে কেউ কেউ আবার অন্য পেশা শুরু করে সংসার চালাচ্ছেন। সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিলে তাদের কিছুটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো বলেও জানান এসব জেলে।
পশুর নদীর জেলে উপজেলার চালনা এলাকার নারায়ণ মন্ডল জানান, তার একমাত্র পেশা ইলিশ ধরা। চলতি মৌসুমে মহাজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাদন নিয়ে জাল এবং নৌকা কিনেছেন। কিন্তু ভরা মৌসুমেও নদীতে দিনরাত জাল ফেলে ইলিশ মাছের দেখা না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এতে অভাব অনাটনে তাদের ৪ সদস্যের পরিবার অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
মাছ বাজারে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সমরেশ বিশ্বাস নামে একজন ক্রেতার। তিনি বলেন, স্থানীয় নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি বিধায় মাছ কিনতে এসেছেন। কিন্তু বাজারে দুই একটা মাছ আসায় দাম অত্যন্ত চড়া। সবার পক্ষে এত দামে মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব না। তাই মাছ না কিনে তিনি নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
চালনা বৌমার গাছতলার মাছ বাজারের ব্যবসায়ী হালিম শেখ জানান, স্থানীয় নদীর ইলিশ তেমন একটা বাজারে আসছে না। যা দুই একটা আসছে তা এক কেজি ওজনের মাছ ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা বিক্রি করছেন। আর ছোটগুলো ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা বিক্রি করছেন। এছাড়া জাঁটকা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দামে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রণজিত কুমার বলেন, এখন তো নদীতে জেলেদের জালে দুই একটা ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পড়বে। তা ছাড়া বৃষ্টি কম এবং স্থানীয় নদী পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় ও নদীর মুখে বিভিন্ন কারণে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় মাছ উঠতে একটু দেরি হয়।