চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে হালদা নদী, ধুরুং খাল এবং সর্তা খালের পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বিশেষত বন্যার পানিতে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে মাটি, টিনের বাড়িঘর এবং মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে।
উজান থেকে নামা হালদা নদীর ঢলে পূর্ব সুয়াবিলে দেখা দিয়েছে বাড়িঘর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ভাঙনের চিত্র। এমন অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে গেছে এই এলাকায়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক, ফটিকছড়ি-বারৈয়ারঢালা সড়কে দেখা যাচ্ছে ভাঙন। পানি নামার পর সড়কের ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠেছে।
ফটিকছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই উপজেলায় নদী ও খালগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমতে থাকলেও এখনো সুয়াবিলের বিভিন্ন জায়গায় পানি এখনো কমেনি।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বিশেষত বন্যার পানিতে গ্রামীণ সড়কগুলো এবং বাড়িগুলো ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কৃষিতেও বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে এই বন্যা।
উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে ফটিকছড়িতে বন্যাদুর্গত মানুষের সং্খ্যা এক লাখ দুই হাজার। বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৬০০টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে সাত হাজার ২০০টি। বন্যায় ভেসে গিয়ে মৃতের সংখ্যা তিনজন। আহত আছেন ২০ জন। এ ছাড়াও এ বন্যায় ২৯ হাজার ব্রয়লার এবং পাঁচ হাজার লেয়ার মুরগি মারা গেছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতিতে পিছিয়ে নেই বৈদু্যতিক ক্ষয়ক্ষতিও। ২৪টি ট্রান্সফর্মার, ১২টি বৈদু্যতিক খুঁটি ১০০ মিটার তারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, ২০ হাজার মানুষ বিদু্যৎবিহীন ছিল এই বন্যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমনের বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও পুকুরের মাছ। আমনের ৮০% বীজতলা পানির ভেতর নিমজ্জিত হয়েছে। ৫০ শতাংশ ফলন নষ্ট হয়ে গেছে।
মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলায় আনুমানিক চার হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আরও ধারণা পাওয়া যাবে। তবে ফটিকছড়িতে এই বন্যা লাখো মানুষের জীবনমান নিচে নামিয়ে দিয়েছে।
সুয়াবিল ইউপির দুই নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব সুয়াবিল এলাকার ইছহাক কামালের ঘর ভেঙে পড়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তিন দিন ঘরের ভেতর পানি ছিল। বাড়িঘর ফেলে অন্যজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। কত কষ্ট সহ্য করেছি- ঘরটা রক্ষা করার জন্য। কিন্তু হালদার বাঁধ ভেঙে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু দুমড়ে-মুচড়ে দিল।
একই এলাকার আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, গত ২০১৮ সালের বন্যায় একই জায়গায় বাঁধটি ভেঙেছিল।
এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করার চেষ্টা করলেও স্থানীয় কিছু মানুষের বাধার কারণে তা আর হয়নি। এই জায়গাগুলোতে বাঁধ না হলে প্রতি বন্যায় এভাবে সবাইকে বাড়িঘর হারাতে হবে।
নাজিরহাট পৌরসভার নাছির মোহাম্মদ ঘাটের হালদার চরের কৃষক সোহেল বলেন, 'প্রবাস ছেড়ে এলাকায় কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এবারের বন্যায় ৪০ শতক জায়গার আখ চাষ আমার নষ্ট হয়েছে। এই ধাক্কা কীভাবে কাটিয়ে উাব, জানি না।'