গত কয়েক বছর ধরে লালমনিরহাটে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হলেও করা হয়নি পুরো কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিয়ার রহমানের সহযোগিতায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা সংস্কারের কাজের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নিজপাড়া মৌজার সুভাসের বাড়ি থেকে বেতো বাড়ির দোলা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পে বেতো বাড়ির দোলা পর্যন্ত কোনো কাজ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নিজপাড়া মৌজার পাকা রাস্তা থেকে রাকাল-মারির দোলা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের নামে কিছু কিছু স্থানে শুধু তোলা হয়েছে রাস্তার ঘাস। ফেলা হয়নি কোনো মাটি। অথচ এ প্রকল্পের নামে তোলা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। চিনিপাড়া মৌজার কবিরের মিল থেকে চিনিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজেও নামমাত্র কাজ করে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। একই চিত্র বৈরাগী কুমোর মৌজার জয়মনি-দীঘি থেকে তেপতি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারসহ অধিকাংশ প্রকল্পের।
শুধু তাই নয়, এর আগে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মিয়াপাড়া বাইতুস ছালাম জামে মসজিদের নামে ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অথচ মসজিদ কমিটির কেউ জানেন না সে বরাদ্দের কথা। শুধু তাই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় কবরস্থানের বরাদ্দ হয়েছে আত্মসাৎ। বাদ যায়নি মন্দিরের টাকাও। বানিয়ার দীঘি কালী ও দুর্গা মন্দিরের বরাদ্দ এক লাখ টাকা হলেও দেওয়া হয় ৮৫ হাজার টাকা। এমনকি প্রতিষ্ঠানের কেউ চাইলেও হতে পারেননি প্রকল্পের সভাপতি। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্তাবলিতে উলেস্নখ রয়েছে মসজিদের জন্য ইমাম এবং মন্দিরের জন্য পুরোহিত হবেন প্রকল্প সভাপতি। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান তার পছন্দমতো ব্যক্তিদের বানিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি। এতো অনিয়ম করার পরও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা জানান, কোনো স্থানেই পুরো কাজ করা হয় না। ভুয়া বিল বানিয়ে সব টাকা মেরে খায়। কাজ হয়েছে কিনা তা দেখতেও আসেন না কেউ।
বাইতুস ছালাম জামে মসজিদের কোষাধ্যক্ষ গোলাম ফারুক জানান, তারা মসজিদের নামে লালমনিরহাট সদর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস থেকে কোন টাকা পাননি। যদি তাদের মসজিদের নামে কেউ টাকা উত্তোলন করে থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অনিয়মের বিষয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিয়ার রহমান কোনো কথা বলতে রাজি নন। তার দাবি যা কিছু করা হয়েছিল তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কথামতো।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, 'দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। আমরা এসব নিয়েই ব্যস্ত। কাজগুলো দেখার সময় পাইনি।' তাহলে কাজের বিলগুলো দেওয়া হয়েছে কেন- এমন প্রশ্ন করলে কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি।