চোখ হারিয়েও দুঃখ নেই কলেজছাত্র সামীর
দেশের জন্য অবদান রাখতে পেরে গর্বিত
প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন কলেজছাত্র মোস্তাহিদ হোসেন সামী। তার চোখ, মুখসহ সারা শরীরে অন্তত ১৭টি ছররা গুলি (স্প্রিন্টার) লাগে। দুটি স্প্রিন্টার বাম চোখে ঢুকে যায়। কয়েক দফা অপারেশনের পরও একটি স্প্রিন্টার চোখ থেকে বের করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাম চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পান না।
মোস্তাহিদ হোসেন সামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের খড়মপুর এলাকার আক্তার হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি উত্তরাহাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭টি পরীক্ষা দিয়েছেন। এক মাস ধরে চোখের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সামী। সারাজীবনের জন্য একটি চোখ হারানোর দুশ্চিন্তায় ভুগছে তার পরিবার। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত স্বজনরা।
সামীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করেন সামী। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেন। ১৮ জুলাই রাজউক স্কুলের সামনে আন্দোলন করার সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় তার বাম চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির স্প্রিন্টার বিঁধে যায়। পরিচিতরা তাকে উদ্ধার করে আগারগাঁও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে কারফিউ শিথিল হলে হাসপাতালে গিয়ে শরীরের স্প্রিন্টার বের করা হয়। কিন্তু গুলির কিছু অংশ চোখে রয়ে যায়। এটি বের করতে না পারলে আজীবন এক চোখ অন্ধত্ব নিয়ে চলতে হবে। চিকিৎসকরা তাকে দেশের বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এজন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থ। ইতোমধ্যে তার চিকিৎসায় বহু টাকা খরচ হয়েছে। তার চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা।
সামী বলেন, 'দেশের জন্য কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরেছি। এ জন্য গর্ববোধ করছি।' এক চোখে দেখতে কষ্ট হয় জানিয়ে আরও বলেন, 'আমার একটি চোখ গেলেও আরেকটি চোখ তো ভালো আছে। অনেকে তো দুটি চোখ হারিয়েছে।'
বাবা আক্তার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সামীর চোখে দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। গুলির একটি অংশ এখনো চোখে রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এটি বের করা সম্ভব না। দেশের বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ জন্য ২০-২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। নতুবা এই চোখে আর কোনদিন দেখতে পারবে না।