গত বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি। ডুবে যায় উপজেলার চার ইউনিয়নের অন্তত ৫০টির বেশি ক্রিক, পুকুর, লেক ও মাছের ঘের। সেই সঙ্গে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে খাল-বিল ও নদীনালায় বিচরণ করছে এসব জলাশয়ে থাকা কয়েক লাখ টাকার মাছ। আর বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাল-বিল থেকে এসব মাছ ধরার মহোৎসব শুরু হয়েছে। হালদা নদীর শাখা-উপশাখাসহ খাল-বিল হতে ধরা পড়ছে রুই, কাতল, কার্প ও মৃগেলসহ অসংখ্য চাষের মাছ।
রোববার সকালে উপজেলার বড়বিল ও তুলাবিল এলাকায় খালের পাড় গিয়ে দেখা যায় বরশি ও জাল দিয়ে মাছ ধরার এমন দৃশ্য।
উপজেলা মৎস্য অফিস ও ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ে গত দুই যুগে এমন ভারী বৃষ্টি আর বন্যা হয়নি। ফলে উপজেলার নানা প্রান্তে থাকা ব্যক্তি পর্যায়ের পুকুর, লেক, বিভিন্ন সমিতির পরিচালনায় থাকা ক্রিকের (লেক) বাঁধ ও মাছের ঘের উপচে এবং গুটিকয়েকের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে টনে টনে মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য অফিসের তথ্যে প্রায় অর্ধশত পুকুর ও ক্রিকের মাছ ভেসে যাওয়া কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার পান্নাবিল এলাকায় শামসুল হক ভুঁইয়া নামের এক ব্যক্তির ক্রিকের বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে গেছে অন্তত চার লাখ টাকার মাছ। চৈক্কাবিল এলাকায় একাধিক ক্রিকের পানি উপচে ৫-৬ লাখ টাকার মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, ডাইনছড়ি, ভোলাইয়াপাড়া, বাটনাতলী, তুলাবিল, মরাডলু, গভামারা, চেঙ্গুছড়া, গোদাতলী, তিনটহরী এলাকায় বিভিন্ন পুকুর ও ক্রিক উপচে মাছ ভেসে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে হালদা নদীর শাখা, উপ-শাখার বিভিন্ন পয়েন্টে শনিবার সকাল থেকে উৎসুক জনতাকে বড়শি ও জাল দিয়ে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতে দেখা গেছে।
রোববার সকাল ১০টায় মানিকছড়ি খালের তুলাবিল অংশে গিয়ে দেখা যায়, সুরুজ মিয়া, আবুল কাশেম, সোলাইমান ও ফারুক হোসেন জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। এ সময় তারা জানান, রুই, কাতল, মৃগেল ও কার্পসহ নানা জাতের মাছ ধরছেন তারা। গত দুই দিনে অন্তত দশ কেজি কাছ ধরে বিক্রি করেছেন। এ ছাড়াও বড়বিল খালে অংথৈই মারমা, জাকির হোসেন, মংসানু মারমাসহ অন্তত ১৪-১৫ ব্যক্তি, কিশোর একযোগে বড়শি ফেলে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছেন। তারা জানান, 'জীবনে খাল বা ছড়ায় এত মাছ চোখে দেখিনি! বড়শি ফেলা মাত্র মাছ আটকে যায়! মনে হচ্ছে খালে এখন মাছের হিড়িক!'
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার সরকার বলেন, 'টানা ভারী বৃষ্টির পাহাড়ি স্রোতে প্রায় অর্ধশত পুকুর, ক্রিকের বাঁধ উপচে প্রচুর মাছ ভেসে গেছে। তবে কী পরিমাণ মাছ ভেসে গেছে বা মাছচাষির প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।'