জায়গার সংকুলান না হওয়ায় দুইজনের বেঞ্চে বসতে হচ্ছে ছয়জন শিক্ষার্থীকে। শব্দের কারণে তারা মনোযোগ দিতে পারে না। একটি শ্রেণিকক্ষকে মাঝখানে বেড়া দিয়ে করা হয়েছে দুই শ্রেণির কক্ষ। ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার খোর্দ্দবলাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।
একতলা বিদ্যালয় ভবনের কক্ষ মাত্র দুটি। একটি কক্ষে শিক্ষকরা দাপ্তরিক কাজ করছেন। আরেকটি কক্ষের মাঝখানে বেড়া দিয়ে ছোট দুটি কক্ষ বানানো হয়েছে। এ ছাড়াও স্স্নিপের টাকা দিয়ে দুটি টিন শেড ঘর করা হয়েছে। এর মাঝে বেড়া দিয়ে চারটি কক্ষ বানানো হয়েছে। এসব কক্ষে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণির পাঠদান করা হচ্ছে। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় দুইজনের বেঞ্চে বসতে হচ্ছে ছয়জন শিক্ষার্থীকে। এ ছাড়া এক শ্রেণির শব্দের কারণে অন্য শ্রেণির ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থা বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দবলাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শ্রেণিকক্ষ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। বছর বছর বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে ২৫৭ জন শিক্ষার্থী আছে। এলাকাটি বড় হওয়ার প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে পাঠদান করানো আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, শ্রেণিকক্ষ কম থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হয়। এক শ্রেণির পাঠদানের শব্দে আরেক শ্রেণির পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। বাচ্চাদের মনোযোগের ঘাটতি হয়। নতুন ভবন হলে শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধি পেলে এমন পরিস্থিতি থাকবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৪২ সালে একটি টিনের ঘরের মাধ্যমে খোর্দ্দবলাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে টিনের ঘরের জায়গায় চার কক্ষের একটি পাকা ভবন করা হয়। সেখানেই চলছিল বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। সেটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ২০১১ সালে পুরনো ভবনের পাশে দুই কক্ষের আরও একটি স্থাপনা তৈরি করা হয়। ২০২০ সালে পুরনো স্থাপনা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরপর থেকে নতুন স্থাপনার দুটি কক্ষকে একটিতে শিক্ষকদের দাপ্তরিক কক্ষ বানানো হয়েছে। আরেকটিতে বেড়া দেওয়ার মাধ্যমে দুটি শ্রেণি কক্ষ বানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকিবুর রহমান মিল্টন জানান, বিদ্যালয়টিতে কক্ষ হওয়ায় ক্লাস করতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শ্রেণি কক্ষসহ বিদ্যালয়ের সব সংকট দেখিয়ে অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত অভিযোগ করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, একটি কক্ষের মাঝখানে পর্দা দিয়ে এক অংশে প্রাক প্রাথমিক ও অন্য অংশে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলছিল। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করছিল। এক পাশের শব্দে অন্য পাশে পড়া তো দূরে থাক, কথা বলা ও শুনতেও সমস্যা হচ্ছিল। অন্য সব কক্ষেই মাঝখানে বেড়া দেওয়া। এ কক্ষের এক পাশে এক শ্রেণির পাঠদান চললে অন্য পাশে চলে আরেক শ্রেণির পাঠদান।
এ সময় বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানায়, ক্লাসে একটু দেরি করে এলে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। দুইজনের বেঞ্চে গাদাগাদি করে চারজনকে বসতে হয়। পাশের কক্ষের চেঁচামেচিতে কী পড়ানো হয়, তা-ও ঠিকমতো বোঝা যায় না।
বিষয়টি নজরে আনা হলে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রভাস চন্দ্র সরকার বলেন, ওই বিদ্যালয়ের ভবনের জন্য অনেক আগেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রস্তাব পাস হয়ে আসলেই ওখানে একটি পাকা ভবণ নির্মাণ করা হবে।