মহম্মদপুর উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাদ্দাম হোসাইনের বিরুদ্ধে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতিসহ বহু অনিয়ম ও ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইনের দুর্নীতির বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে উপজেলার ১৬ জন ঠিকাদার স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ গত ১৪ আগস্ট এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে ই-মেইলে এবং গত ১৮ আগস্ট এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ডাকযোগে (রেজিস্ট্রিকৃত) পাঠিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলজিইডির নতুন সিডিউল রেট দেওয়ার পরেও সর্বোচ্চ ৮ ভাগ (৮%) ঊর্ধ্বদরে তার আস্থাভাজন এক ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেন। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এডিপির (অউচ) দরপত্র ওটিএম (ঙঞগ) পদ্ধতিতে আহ্বান করেন। প্রতিটি প্যাকেজে তার আস্থাভাজন একজন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন এবং তাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অথচ অধিক স্বচ্ছতার জন্য সারাদেশে এলটিএম (খঞগ) পদ্ধতিতেই এডিপি দরপত্র আহ্বান করা হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে তার দপ্তরের কার্যসহকারী নাজমুল হোসেন সাদ্দামের (কুটি সাদ্দাম) স্ত্রীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'নাহিয়ান ট্রেডার্স'কে কাজ পাইয়ে দেন। কিন্তু ওটিএম পদ্ধতিতে নাহিয়ান ট্রেডার্সের দরপত্রে অংশগ্রহণের যোগ্যতায় ছিল না। একই অর্থবছরে উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইন এক সহকারী প্রকৌশলীর আত্মীয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'আর এস কর্পোরেশন'কে কাজ পাইয়ে দেন। এই প্রতিষ্ঠানেরও ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্রে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ছিল না বলে অভিযোগপত্রে উলেস্নখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কেবল একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করিয়েই কাজ দিয়ে দেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইনের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি তিনি জাইকা প্রকল্পের একটি টেন্ডারে ঝিনাইদহ জেলাধীন এক ঠিকাদার আত্মীয়ের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে অবৈধ উপায়ে রেটকোট দিয়ে সহায়তা করে দু'টি কাজ পাইয়ে দেন। জাইকা বরাদ্দকৃত অর্থে গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে ইছামতি বিলের কৃষক ছাউনি এবং ঝামা ফেরিঘাটে যাত্রী ছাউনির কাজে টাইলস ও বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন না করেই বিল তোলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে উপজেলায় 'জয় সেন্টার' নির্মাণে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকা সত্ত্বেও তাকে কোনো দায়িত্ব না দিয়ে খালিদ হাসান নামের নতুন একজন সার্ভেয়ারকে দিয়ে কাগজপত্র স্বাক্ষর করিয়ে নেন। অভিযোগ অনুযায়ী এ কাজটি পেয়েছিলেন ঝিনাইদহ জেলাধীন মিজানুর রহমান নামের এক ঠিকাদার। কিন্তু স্থানীয় একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে মিজানুর রহমানকে ম্যানেজ করে প্রকৌশলী নিজেই নেপথ্যে থেকে ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন। এতে যে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তা পূর্বে কোনো নির্মাণ কাজে ঢালাইয়ে ব্যবহৃত হয়েছিল। রাতের আধারে সেই পাথরের ওপরে কিছু নতুন পাথর ফেলে ব্যবহৃত ও নতুন পাথর মিশিয়ে কলম ঢালাই দিয়েছেন। সিডিউলে বর্ণিত এফএম বালু ব্যবহার করা হয়নি।
অভিযোগ মতে, উপজেলার ৯০ ভাগ কাজের কার্যাদেশ সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার খালিদ হাসানের (১৬তম গ্রেড) নামে দেন। ১০ম গ্রেডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকা সত্ত্বেও সব কাজেই ১৬তম গ্রেডের সার্ভেয়ারকে দিয়ে করান এবং ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজসে নেপথ্যে নিজেই ব্যবসা করেন। মধুমতি নদীর ওপর শেখ হাসিনা সেতুতে লাইট স্থাপনের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে একটি লাইটও স্থাপন না করে টাকা তুলে নেন। এছাড়াও কাজ না করে এবং কম কাজ করে সম্পূর্ণ বিল উত্তোলন, প্রকৌশলীর আত্মীয়ের নামে লাইসেন্সে কাজ দিয়ে নিজেই ঠিকাদারি করেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কার্যসহকারী নাজমুল হোসেন সাদ্দামের স্ত্রীর নামের লাইসেন্সে আংশিক কাজ করে সম্পূর্ণ বিল উত্তোলন, রেটকোড গোপন করে নিজের লোককে কাজ পাইয়ে দিয়ে নিজেই ঠিকাদারি করাসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে উপজেলা প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারী ও স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আজমাইন ট্রেডার্সের স্বত্ব্বাধিকারী এস এম শাহরিয়ার বলেন, 'উপজেলা প্রকৌশলী বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় বিচার আশা করি।'
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্ব্বাধিকারী হাফিজুর রহমান বলেন, 'সঠিক তদন্ত করলেই উপজেলা প্রকৌশলীর বিভিন্ন অনিয়ম ও ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়গুলো প্রমাণ হবে।'
এ বিষয়ে মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী আ. ন. ম. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, 'মহম্মদপুর উপজেলার কিছু ঠিকাদার আমাদের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। যেটির অনুলিপি আমাকেও দেওয়া হয়েছে। যেহেতু প্রধান প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সেহেতু ওই দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসাইন বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের একটিও সঠিক নয়। কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ঠিকাদারদের ভুল বুঝিয়ে অভিযোগে স্বাক্ষর নিয়েছেন। স্থানীয় একটি চক্র আমার কাছে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ার কারণে এসব মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও আজগুবি অভিযোগ করিয়েছেন।'