ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
ভারতীয় পানি আগ্রাসন থেকে মুক্তির দাবিতে বেরোবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা -যাযাদি
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), মানিকগঞ্জের নার্সিং কলেজ, ঝিনাইদহ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের খানসামা ও ঝালকাঠির নলছিটিতে ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর- বেরোবি প্রতিনিধি জানান, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এবং উদ্দেশে প্রণোদিতভাবে ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে সেটি নগরীর খামারমোড় হয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেটে এসে একত্র হয়। সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, আমরা যখন বিধ্বস্ত দেশকে সংস্কার করতেছি, তখনই ভারত চক্রান্ত করে বাঁধ খুলে দিয়েছে। আর কোনো চক্রান্ত আমরা মেনে নেব না। বাংলা বিভাগের সুমন মিয়া বলেন, আমরা আর বৈষম্য চাই না। ভারত এভাবে বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের কৃত্রিম বন্যা তৈরি করেছে। আমরা আর অন্যায় মেনে নেব না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই এর প্রতিবাদ করব। স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢল বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে মানিকগঞ্জের নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার নার্সিং কলেজ থেকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বাসস্ট্যান্ড থেকে খালপাড় হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় গিয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত বাংলাদেশের ঘুমন্ত মানুষের ওপর পানি ছেড়ে দিয়েছে। এই পানিতে পূর্ব অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পানি প্রবেশে শত শত গ্রাম পস্নাবিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পূর্ব নোটিশ ছাড়া পানি ছেড়ে দেওয়ায় ঘরবাড়ি, পশু এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই মুহূর্তে পানি ছাড়া বন্ধ না করলে বাংলাদেশের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ভারতীয় আগ্রাসন ও সব প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের পায়রা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক শারমিন সুলতানা, আবু হুরায়রা, সাইদুর রহমান, আব্দুলস্নাহ আল মামুন, রিহান হোসেন রায়হান, নুসরাত জাহান সাথী ও এলমা খাতুন। বক্তরা বলেন, ভারতের সব আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবার রুখে দাঁড়ানোর উপযুক্ত সময়। প্রতিবেশী পরিচয়ে ভারত পানি আগ্রাসন, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও বাংলাদেশের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটছে। ভারতের এসব আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বক্তরা ফারাক্কাসহ বিভিন্ন বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টি করে লাখ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের হল চত্বরের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরবর্তীতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের দিকে মিছিল করে তৃতীয় একাডেমিক ভবনের সামনে শেষ করে। খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মব জাস্টিসের মাধ্যমে শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ ও হয়রানির প্রতিবাদে এবং ভারতীয় আগ্রাসন ও অন্যায়ভাবে বাঁধ খুলে দিয়ে বন্যার সৃষ্টির প্রতিবাদে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট শাপলা চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার পাকেরহাট শাপলা চত্বরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা শাখার অন্যতম নেতা মো. আজিজার রহমান তার বক্তব্যে বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনার পদত্যাগের পর দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চলছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের হয়রানি ও জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো এবং নানা অপকর্মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সঙ্গে সবাইকে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সজাগ থাকার আহ্বান জানান এবং ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি জানান, ভারতীয় পানি আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ দেওয়ার প্রতিবাদে নলছিটিতে ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সরকারি নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয়ে সেলিম চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্ররা ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা বলেন, ভারত প্রতিবছরের মতো এবারও বাঁধের পানি ছেড়ে বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা বন্যার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। তারা অবিলম্বে সরকারকে ভারতকে দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।