গুলিবিদ্ধ সৌমেন-আহাদের খোঁজ রাখেনি কেউ

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন

প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন মন্ডল ও বিসিএস পরীক্ষার্থী আহাদ হোসেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যন্ত্রণায় কাতর হলেও তাদের খোঁজ কেউ রাখেনি। চিকিৎসা-সুস্থতা নিয়েও তাদের রয়েছে সংশয়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন মন্ডল যশোরের মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামের শিক্ষক দম্পতি পশুপতি মন্ডল ও রমা রানী মন্ডলের ছেলে এবং বিসিএস পরীক্ষার্থী আহাদ হোসেন একই উপজেলার বলিয়ানপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে। জানা যায়, একটি বেসরকারি আইটি ফার্মে চাকরিতে যোগদানের ৪দিন পরেই কোমরে গুলিবিদ্ধ হন সৌমেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলায় ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে সামিল হন তিনি। এখন বাড়িতে বিছানায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন তিনি। এখনো তার চোখে-মুখে আতংক। তার বাড়িতে গেলে এ চিত্র চোখে পড়ে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মার মুখে হাসি ফোটানোর একরাশ আশা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র-জনতার এ বিজয় তিনি উদযাপন করতে পারেননি। সৌমেন চলতি বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি। এরইমধ্যে ফাস্ট আইটি ফার্মে চাকরি নেন। সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সৌমেন বলেন, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। গেলো ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বসিলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা মিছিল বের করে। তিনি ওই মিছিলে যেতেই পুলিশের আক্রমণের শিকার হন। ওপর থেকে হেলিকপ্টার থেকে মিছিলে গুলি করা হচ্ছিল। আর নিচ থেকে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই উরুতে কিছু একটা লেগেছে বলে অনুভূত হয়। কিছুক্ষণ পর দেখতে পান তার পরিহিত প্যান্ট রক্ত। পরে ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে দেখতে পান উরুতে গুলি লেগে নাভির নিচ দিয়ে বের হয়ে গেছে। উরুর হাড় ভেঙে গেছে। এদিকে ফিকে হতে চলেছে চোখে গুলিবিদ্ধ আহাদ হোসেনের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আহাদ গত ৫ আগস্ট মিছিলে সামিল হলে চোখে বুলেটবিদ্ধ হন। এখন বাড়িতে চোখের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। আন্দোলনের সফলতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। বাড়িতে গেলে এ চিত্র চোখে পড়ে। তিনি একই উপজেলার বলিয়ানপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে একটি ঢাকার একটি কোচিং-এ ভর্তি হন তিনি। থাকতেন মালিবাগ এলাকায়। সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মিছিল রামপুরা এলাকায় পৌঁছাতেই পুলিশ তাদের শান্ত থাকতে বলেন। তারা শান্ত হয়ে বসে থাকতেই হঠাৎ রাবার বুলেট তার চোখে এসে লাগে। তিনি আর কিছুই দেখতে পান না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। স্বজনরা আহাদ হোসেনের চিকিৎসা ও সুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। মা রাজিয়া বেগম ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে চোখের পানি শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছছিলেন। ক্ষোভে আহাদ হোসেন বলেন, তাদের আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও এখনো কেউ তার খোঁজ নেয়নি। অনেকেই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। তিনি কি এই জন্য জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিলেন বলে প্রশ্ন করেন।