গোয়ালন্দে কেঁচো সার উৎপাদনে ভাগ্যবদল
প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কেঁচো দিয়ে জৈবসার (ভার্মি কম্পোস্ট সার) তৈরি করে সারা ফেলেছেন গৃহবধূ জাসমা খাতুন। এতে তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। পুরস্কার পেয়েছেন সেরা কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে। তার উৎপাদিত স্বল্পমূল্যের গুণগত মানসম্মত সারের চাহিদা এলাকায় ব্যাপক। কৃষি ফসল উৎপাদন ছাড়াও তার এ সার ব্যবহৃত হচ্ছে মৎস্য খামারেও।
উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবুওছিমদ্দিন পাড়ার মাহাবুবুল আজমের স্ত্রী জাসমা খাতুন। মাহাবুবুল আজম ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। সংসারে তাদের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
জাসমা আক্তার জানান, ফরিদপুরে তার এক বান্ধবীর খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ২০২২ সালে মাত্র ৩ কেজি কেঁচো দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। প্রথমে মাসে ১০-১২ কেজি জৈবসার উৎপাদন করতে পারতেন।
এজন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করতেন গোবর। তা থেকে প্রথমে সিমেন্টের চাকের মধ্যে কম্পোস্ট সার তৈরি করতেন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তিনি প্রতিমাসে ৮-১০ মণ জৈবসার প্রস্তুত করে থাকেন। প্রতি কেজি সার পাইকারি পর্যায়ে ১০-১২ টাকা এবং খুচরো পর্যায়ে ১৪-১৫ টাকা করে তিনি বিক্রি করে থাকেন।
জৈব সার উৎপাদনে তিনি নিজ খামারের দুটি গরুর গোবর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে সংগৃহীত গোবর ব্যবহার করে থাকেন।
এই সার উৎপাদন করে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে শ্রেষ্ঠ কৃষি উদ্যোক্তার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করছে জাসমার খামারে। তারা বলেন, এখানে কাজ করে তারা সংসার চালাচ্ছেন। জাসমা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।
জাসমা আক্তার জানান, তার উৎপাদিত সার স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরও বাইরে বিক্রি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সহযোগিতা করে থাকে। এ ছাড়া তারা খামার বৃদ্ধির জন্য টিন, ইট ও জৈবসার ছাকনির জন্য সরকারিভাবে অনুদান হিসেবে একটি ছাঁকনি যন্ত্র দিয়েছেন। তবে এ অনুদান খুবই কম। নিজের অর্থ দিয়ে খামার পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। সরকার যদি তাকে আরও অনুদান বা সহযোগিতা করত, তাহলে আরও বড় পরিসরে খামারটি পরিচালনা করতে পারতেন ও সৃষ্টি হতো আরও কর্মসংস্থান বলে জাসমা জানান।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকনুজ্জামান বলেন, জাসমার খামারের উৎপাদিত জৈব সারের গুণগতমান অনেক ভালো। কৃষকরা এই সার ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হচ্ছেন। আমি মাঝেমধ্যেই খামারটি পরিদর্শন করে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। ইতোমধ্যে তার খামার বৃদ্ধির জন্য সরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। তাকে আরও সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।