লালমোহনে ৫৫৫ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা, চলাচলে দুর্ভোগ
প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বর্ষা ঋতুর শেষে এসে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে ভোলার লালমোহন উপজেলার কাঁচা সড়কগুলো দিয়ে কোনো যানবাহন চলছে না। কাঁচা সড়ক এলাকার মানুষজনের জন্য এখন ওই সড়কগুলো দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছেন ওই এলাকার মানুষগুলো। লালমোহন উপজেলায় বর্তমানে ৫৫৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই কিছু কিছু এলাকার এসব কাঁচা সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে কাদাময় হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে সীমিত পরিসরে এসব কাঁচা সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে কোনো যানবাহনই চলে না এসব সড়ক দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু এলাকার মানুষ একপ্রকার গৃহবন্দির মতো দিন পার করেন। লালমোহন উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট সড়ক রয়েছে ৯৬০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৫৫৫ কিলোমিটার সড়কই কাঁচা। এর মধ্যে উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নে ৯৫.৬৮ কিলোমিটার, বদরপুর ইউনিয়নে ৭৫.৪৬ কিলোমিটার, ধলীগৌরনগর ইউনিয়নে ৬৯.৪৬ কিলোমিটার, রমাগঞ্জ ইউনিয়নে ৬১.৭১ কিলোমিটার, লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে ৬১.৫৯ কিলোমিটার, লালমোহন ইউনিয়নে ৫৯.১৪ কিলোমিটার, কালমা ইউনিয়নে ৫৬.৩৬ কিলোমিটার, পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে ৪২.৬৬ কিলোমিটার এবং ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নে ৩৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। এছাড়া বাকি সড়কগুলো পাকা, এইচবিবি, আরসিসি এবং ইউনি বস্নকের আওতায় রয়েছে। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে উপজেলা যেসব এলাকায় কাঁচা সড়ক রয়েছে ওইসব এলাকার মানুষজন বৃষ্টির সময় চরম দুর্ভোগে পড়েন। ঘর থেকে বের হওয়াই এসব মানুষের কাছে দুষ্কর হয়ে পড়ছে। বৃষ্টিতে বেহাল এমনই একটি সড়ক লালমোহনের রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ডা. আজাহার উদ্দিন সড়কের পূর্ব মাথার ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের কাজীবাজার পর্যন্ত যাতায়াতের সড়ক। চরমোলস্নাজী এলাকার বাসিন্দা নূরুল ইসলাম, বাবুল এবং নাছির উদ্দিন বলেন, ধলীগৌরনগরের চরমোলস্নাজী থেকে কাজীবাজার সড়কটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। তবে বর্ষার মৌসুমে চলাচলের জন্য খুবই অনুপযোগী হয়ে যায় সড়কটি। বর্ষায় এই সড়ক দিয়ে যানবাহনতো দূরের কথা পথচারীদের পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। পূর্ব চরউমেদ আহম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাছনা আক্তার, সোনিয়া বেগম এবং তানজিল হোসেন জানায়, শুষ্ক মৌসুমে সড়কটি দিয়ে কিছুটা ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারলেও বিপত্তি বাঁধে বর্ষায় মৌসুমে। তখন মাদ্রাসায় যেতে খুবই কষ্ট হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি আর মাটি একাকার হয়ে সড়টির চরম বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় পিছলে পড়ে জামা-কাপড় এবং বইখাতা ভিজে যায়। আরেকটি বেহাল সড়ক উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বালামচরের দক্ষিণ পাশ থেকে দেওয়ানকান্দি পর্যন্ত সড়কটি। বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও এই সড়কটি কাঁচাই রয়ে গেছে। এই কাঁচা সড়কে চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাফেরা করেন স্থানীয়রা। লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের দিনার বাপের ব্রিজ থেকে পূর্ব দিকে লর্ডহাডিঞ্জ পর্যন্ত কাঁচা সড়কটি ওই ইউনিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই রাস্তা দিয়ে এলাকার মানুষজন পাশ্ববর্তী উপজেলা চরফ্যাশনে যায়। এলাকার হাবিব, আশরাফ, কবির বলেন, এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের। বর্তমানে রাস্তাটি এতোই খারাপ যে একবার এই রাস্তায় কেউ চলাচল করলে তাকে কর্দমাক্ত হয়ে যেতে হয়। কর্তৃপক্ষ দ্রম্নত এই রাস্তাটি পাকা করলে এলাকাবাসীর চলাচলে সুবিধা হবে। এলজিইডির লালমোহন উপজেলা প্রকৌশলী রাজীব সাহা বলেন, উপজেলার কাঁচা সড়কগুলোর ভেতর থেকে গুরুত্ব বিবেচনায় ইতোমধ্যে ১০২ কিলোমিটার সড়ক পাঁকাকরণের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাস ও বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা যাবে। এছাড়া অন্য যেসব কাঁচা সড়ক রয়েছে সেগুলোও পাকাকরণের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রস্তাব পাঠানো হবে।