বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গাংনীতে কৃষকদের ভরসা এখন পাটকাঠি

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
মেহেরপুরের গাংনীতে পাটকাঠি রোদে শুকাচ্ছেন চাষিরা -যাযাদি

মেহেরপুরের গাংনীতে চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে পাটের দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও বতর্মানে কমেছে পাটের বাজার দর। তাই উৎপাদন খরচ উঠাতে কৃষকদের চোখ এখন পাটকাঠির দিকে। পাটখড়ির নানাবিধ ব্যবহারের ফলে যথেষ্ট চাহিদাও বেড়েছে পাটকাঠির। বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠির ব্যবহার বৃদ্ধিতে এর প্রতি যত্নবান হয়েছেন কৃষকরা। পাটকাঠির কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় অনেক চাষি পাট চাষের খরচ উঠাতে পারছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

পাট চাষিরা বলছেন, অনাবৃষ্টি, শ্রমিক সংকট ও মজুরি বৃদ্ধি, পাট পচানোর জন্য পুকুর ভাড়াসহ নানা কারণে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অথচ বাজারে পাটের দাম একেবারই কম। অধিকাংশ পাট চাষি গর্তখুড়ে সেলো ইঞ্জিন মাধ্যমে পানি দিয়ে দিচ্ছেন পাট জাগ। যার ফলে পাটের আশের রং নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে বাজারমূল্য। তবে পরিবর্তন হচ্ছে না শুধু পাটখড়ির তাই পাটের আঁশের লোকসান পুষিয়ে নিতে পাটকাঠিতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন চাষিরা।

জেলার গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের পাটচাষি আকবর আলী জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এলাকা ভিত্তিক মাটির উর্বরতা একেক রকম। কোনো কোনো এলাকার মাঠে এক বিঘা জমিতে পাট হয় ৮ থেকে ১০ মণ। আবার কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৪ মণ। বতর্মানে বাজারে নতুন পাটের দাম চলছে ১৮শ' টাকা ২০০০ টাকা মন। আর এক বিঘা জমিতে পাটকাঠি হয় ১৩০ আঁটি। চাহিদা অনুযায়ী প্রতি আঁটি পাটকাঠি বিক্রি হয় ৪০-৪৫ টাকা। তাতে বিঘা প্রতি পাটকাঠিতে আসে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। গেল বছর একইভাবে পাটকাঠি বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করেছেন তিনি।

গাংনী উপজেলার কোদাইলকাটি গ্রামের পাটচাষি আব্দুল গণি জানান, এ এলাকার মাটি মোটা। এখানে প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয় ১৩ মণের মতো। আবার এলাকায় নদী থাকাই পাটের জাগ ভালো হয়। এতে পাটের আশের রং ভালো আসে ও পাটকাঠিও ভালো থাকে। এতে পাট ও পাটকাঠির দাম ভালো পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে আমরা পাটকাঠি বিক্রি করি ৭-৮ হাজার টাকার মতো। এ বছর এক বিঘা জমির পাট চাষ করে তা জাগ দিয়ে ঘরে তুলতে ১৭ হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ হয়ে যাচ্ছে। আর পাট বিক্রি করে টাকা জমছে ১৮ হাজারের মতো। তাই এখন ভরসা পাটকাঠিতে।

পাটকাঠি ব্যবসায়ী শিমুলতলার জালাল উদ্দীন জানান, তিনি দেড় যুগ ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন। এলাকার পুকুরের পানির চেয়ে নদীর পানিতে জাগ দেওয়া পাটকাঠির কদর বেশি। এমনিতেই ব্যবসায়ীরা বিঘা প্রতি পাটকাঠি অনুমান দরে কিনে তা পরিষ্কার করে বিক্রি করেন। এখন পাটের চেয়ে পাটকাঠির দর বেশি এবং চাহিদাও অনেক বলে জানালেন এই ব্যবসায়ী।

পানচাষি আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি গ্রামের ভুলু মিয়া জানান, পানের বরজের ক্ষেত্রে পাটকাঠির বিকল্প নেই। বরজ ঘেরা, ছাউনি থেকে শুরু করে সারিবদ্ধভাবে পানের গাছ দাঁড় করিয়ে রাখতে পাটকাঠি লাগবেই। এমনও সময় আছে ভালোমানের পাটকাঠির জন্য ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা বায়না করে রাখেন বরজের মালিকরা। একই কথা জানালের ফুলবগাদির হাফিজ ও অনুপনগরের জাহাঙ্গীর।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার এমরান হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ২৫০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়। চলতি মৌসুম জেলায় অনাবৃষ্টি ও শ্রমিক সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। বতর্মানে পাটের দাম কিছুটা কম হলেও তা যে কোনো সময় বাড়তে পারে। তাছাড়া পাট চাষ করে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে নেয়ার পর যে পাটখড়ি বা পাটকাঠি পাওয়া যায় স্থানীয়ভাবে তারও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে ও এর মূল্য বেশি। আবার জায়গা বিশেষ পাটকাঠি বিক্রি করে উৎপাদনের খরচ উঠে যায়। তাছাড়া জ্বালানি হিসেবে, বাড়িঘর ও সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান বরজ, ইত্যাদি কাজে পাটকাঠির ব্যবহার দীর্ঘকাল আগে থেকেই হয়ে আসছে। পাটকাঠি অবশ্যই চাষিদের জন্য আশীর্বাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে