বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পানিবন্দি লাখো মানুষ

টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, ভাঙনে বিলীন জনপদ

স্বদেশ ডেস্ক
  ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, ভাঙনে বিলীন জনপদ

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা-ধলাই-জুড়ী নদসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদী। এর ফলে পাড় ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। এতে শত শত বসতঘর বিলীন হয়েছে। বিলীনের পথে আরও শতাধিক বসতঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। এদিকে, লোকালয়ে পানি ঢুকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষ। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার জানিয়েছেন, অবিরাম বৃষ্টি ও ভারতের ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী নদীবেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার চার নদ-নদীতে আবারও বেড়েছে পানি। জেলার কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ীনদে মঙ্গলবার আবারও পানি বেড়েছে। মঙ্গলবার নিয়মিত বুলেটিনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবা) জানায়, সাগরের লঘুচাপের প্রভাব ও ভারতের অতি বৃষ্টির ঢলে পানি বেড়েছে।

এদিকে শরৎ মৌসুমে আরেক ধাপে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। জেলার ধলাই ও জুড়ীনদে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ীনদে বিপৎসীমার প্রায় ২ মিটার ওপর ও ধলাই নদে বিপৎসীমার ২৪ সে. মি. ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও কুশিয়ারা নদীতে কিছুটা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও গেল দুই দিনে পানি বেড়েছে প্রায় ২ মিটার। এ ছাড়াও মনু নদে প্রায় ৩ মিটার পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

অন্যদিকে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে হাওড় ও নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষকে আবারও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তবে পাউবো বলেছে, লাগাতার বৃষ্টি থেমে গেলে নদ-নদীতে পানি কমে যাবে। মৌলভীবাজার পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টি হওয়ায় নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানিও নিচে নেমে যাবে। নদ-নদী ভাঙনের বিষয়ে ওই প্রকৌশলী বলেন, জেলার কোনো জায়গায় নদ-নদী ভাঙনের কোনো খবর পাননি।

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগরে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভলু খালে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি। গত সোমবার সকালে ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরদানী পাড়ায় এই ভাঙন দেখা দেয়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিলীন হয়ে যেতে পারে প্রায় ২-৩ শতাধিক বসতঘর। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত যাপন করছেন স্থানীয় লোকজন।

জানা যায়, আধুনগর সরদানী পাড়ায় ডলু খালের পাড় ঘেঁষা গারাঙ্গিয়া রশিদিয়া সড়কে এই ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। আধুনগর বাজার হতে মছদিয় হয়ে গারাঙ্গিয়ার আলুরঘাট পর্যন্ত এই সড়ক বিস্তৃত। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সওদাগর পাড়া, সিপাহী পাড়া ও মছদিয়া বড়ুয়া পাড়ার প্রায় ৫-৬ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এ ছাড়াও মছদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজি সামন্ডল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয়, গারাঙ্গিয়ার উচ্চ বিদ্যালয় ও আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। কয়েকদিনের টানা বর্ষণে চলতি বছরের ২৮ জুন সড়কের ওই স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেঙে যাওয়া স্থানে মেরামত করার উদ্যোগ নেয়। অনেক মালামালও ভাঙন স্থানে মজুত করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় বৃষ্টি ও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে খালে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙন এলাকা দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানিতে নিমিজ্জিত হয়ে নষ্ট হচ্ছে প্রায় ৫০ কানি ধান ক্ষেত।

গত সোমবার বিকালে সরেজিমন দেখা যায়, টানা বৃষ্টির ফলে খালের পানি বেড়ে যাওয়ায় সরদানী পাড়া এলাকায় প্রায় ৫০-৬০ মিটার ভয়াবহ ভাঙন দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ভাঙনের ফলে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরদানী পাড়াসহ আশপাশের এলাকার লোকজন। স্থানীয় মাওলানা দেলোয়ার জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ডলুর পানি ঢুকে সরদানী পাড়া ও বড়ুয়া পাড়া পস্নাবিত হচ্ছে। এভাবে পানি ঢুকতে থাকলে বহু বসতঘর বিলীন হয়ে যেতে পারে। আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। তাই পানি কমে গেলে দ্রম্নত ডলুর ভাঙন সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

আধুনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টির কারণে খালে পানি বেড়ে যাওয়ায়। ডলু খালে গারাঙ্গিয়া রশিদিয়া সড়কের সরদানী পাড়ায় ভয়াবহ ভাঙন দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে পস্নাবিত হচ্ছে সরদানী পাড়াসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক বসতঘর। পানি কমে গেলে দ্রম্নত সংস্কারের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পাউবো'র জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ইউএনও মোহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, পাউবোসহ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাঙ্গলকোট (কুমিলস্না) প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে কুমিলস্নার নাঙ্গলকোট উপজেলা ডাকাতিয়া নদীর পাড়ঘেঁষা, সাতবাড়ীয়া, ঢালুয়া, মৌকরা, রায়কোট দক্ষিণ, রায়কোট উত্তর, বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। ওইসব এলাকায় পানি ঢুকে ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুলমাঠ, মৎস্য খামার ও মুরগির খামার। এসব এলাকায় পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের তপবন, নাইয়ারা, সাজনপুর, ঢালুয়া ইউপির ছোট ভেরলা, বেরলা, মনতলী, গোরকমুড়া, পুটিজলা, খাজুরিয়া, লরতুপা, ছাতারকান্দি, হুগলী, চরজামুরাইল, চৌকুড়ী, নলুয়াকান্দি, মৌকরা ইউপির, পৌঁচইর, চারিতুপা, মোড়েশ্বর, পরকরা, গংগারচর, রায়কোট দক্ষিণ ইউপির নারানদিয়াসহ শতাধিক গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুলমাঠ পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া বক্সগঞ্জ, আদ্রা উত্তর, আদ্রা দক্ষিণ, জোড্ডা পূর্ব, জোড্ডা পশ্চিমসহ বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত মাছের খামার, পুকুর খনন, বাড়িঘর নির্মাণ করে কালভার্ট বন্ধ করায় কয়েকশ' পুকুর ডুবে গেছে। অনেক বাড়িতে পানি উঠে গেছে।

সাতবাড়ীয়া ইউপির তপবন গ্রামের সমাজসেবক আলা উদ্দিন আল মাহমুদ কিরন বলেন, সাতবাড়ীয়া ইউপির সবকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি কয়েকটি স্কুল মাঠে পানি। মানুষজন রান্না করতে পারছে না। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

উত্তর মাহিনী গ্রামের মাহবুবুল হক মেম্বার বলেন, কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় আমার দুটি পুকুর ডুবে পাঁচ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। পিপড্ডা গ্রামের গাংগের পাড় এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'আমার পাড়ার রাস্তাটিতে বুক সমান পানি। এতে ডুবে গেছে বসতঘর। খাটের ওপর আছি। রান্না করতে পারছি না। আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।'

নাঙ্গলকোট ইউএনও সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, 'পুরো উপজেলা পানিবন্দি। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি, পানিবন্দি মানুষের খোঁজখবর নিতে। প্রয়োজন হলে তাদের চাল, ডাল দিতে। যদিও এখনো সরকারি কোনো বরাদ্দ আসেনি। এলে ক্ষতিগ্রস্তদের বিতরণ করা হবে।'

দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় অসংখ্য গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। ঢলের পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় গত সোমবার বিকাল থেকে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যায় উপজেলার মেরুং, কবাখালী ও বোয়ালখালী ইউনিয়নে কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যায় পস্নাবিত এলাকাগুলোর মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া উপজেলার উঁচু এলাকা হিসেবে পরিচিত দীঘিনালা ও বাবুছড়া ইউনিয়নে মাইনী নদীর তীরবর্তী অসংখ্য গ্রাম এবারের বন্যার পানিতে পস্নাবিত হয়েছে বলে জানা যায়। বন্যায় শত শত হেক্টর রোপা, আমন ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে। পর পর তিনবারের বন্যায় কৃষকসহ উপজেলার সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে বলে জানান পাবলাখালী মৌজা প্রধান চিমনি চাকমা।

বন্যার পানিতে উপজেলা সদরের প্রধান সড়কটি তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণ লোকজনকে ভ্যানে চড়ে পারাপার হতে দেখা গেছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মেরুং ইউনিয়নের ছোট মেরুং বাজারসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাঘাইছড়ি ও লংগদু সড়কে যাতায়াতকারী অসংখ্য সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলাসহ আশ্রয় কেন্দ্রে আসা পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও মো. মামুনুর রশীদ।

চাটখিল (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, গত ৪-৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে চাটখিল ও সোনাইমুড়ী উপজেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। অধিকাংশ রাস্তাঘাট এবং অনেক বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দুই উপজেলার কয়েক লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আরও ২-৩ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, চাটখিল ও সোনাইমুড়ী পৌরসভাসহ দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রামীণ সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ডুবে গেছে। বহু বাড়ির উঠোনে পানি উঠেছে। চাটখিল পৌর এলাকায় সরকারি হাসপাতাল ও পৌর শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। দুই উপজেলার কয়েক লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা দাবি করছে, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড যথাযথভাবে মহেন্দ্র খাল ও বিরেন্দ্র খাল খনন না করার ফলে খাল গুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে রয়েছে। যার ফলে পানিবন্দি হয়ে বন্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

চাটখিল ইউএনও শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, জরুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সোনাইমুড়ী ইউএনও কানিজ ফাতেমা জানান, উপজেলায় বন্যার্তদের বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে