পাটের ফলন ও দাম নিয়ে হতাশ কৃষক
প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
বাংলাদেশ সোনালি আঁশের দেশ। এক সময় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল এই পাট। তবে দিন দিন দাম কমে যাওয়ায় সেই পাট চাষে কৃষকদের অনীহা এসেছে। এদিকে নানা কারণে পাটের ফলন এ বছর ভালো না। বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত মূল্য। তাই বর্তমানে পাটের ফলন ও বাজারমূল্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন চাষিরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চাঁদপুরের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় এই অঞ্চলের অধিবাসীদের পাট চাষে বেশ আগ্রহ রয়েছে। চাঁদপুরের প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই কম-বেশি পাট উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
এদিকে এখানকার কৃষকরা পাটের আবাদ করার জন্য বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। পাট কাটার পর উৎপাদন কম এবং বাজারেও পাটের দাম কম। যে কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এই পরিস্থিতিতে কৃষি বিভাগ থেকে এসেও খোঁজখবর নিচ্ছে না বলে জানান এখানকার কৃষকরা।
পাটের আবাদ শুরুর দিকেই দেখা দেয় বৃষ্টি। তখনই পাটের চারাগুলো বিনষ্ট হয়ে যায়। এরপর কিছুটা বড় হলেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পাটের গাছগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারণে কৃষকরা একাধিকবার দুর্যোগের মধ্যে পড়েন।
এ বছর জেলার দুটি সেচ প্রকল্পসহ ৮ উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ৩শ' হেক্টর জমিতে কমেছে পাটের আবাদ। ৩ হাজার ৯ হেক্টরের মধ্যে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৬শ' হেক্টর জমিতে। বর্তমানে জেলার সব উপজেলার কৃষকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাট কর্তন, পাট পানি থেকে তুলে পরিষ্কার করা, রোদে শুকানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী জানান, এ বছর চাঁদপুর জেলায় পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। অতি বৃষ্টির কারণে চারা অবস্থায় পাটের ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে কৃষকরাও তাদের লক্ষমাত্রা অনুযায়ী আবাদ করতে পারেনি। তবে পাটের বাজার মূল্য সঠিক পেলে এবং পাট প্রস্তুত করার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকলে আবারও পাট আবাদে আগ্রহী হবেন কৃষকরা।
এদিকে দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি জানান, দামুড়হুদা উপজেলায় পাটের ফলন এ বছর ভালো না। বর্তমানে বাজারমূল্য নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন স্থানীয় চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাটকাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। পাটের বীজ বপণ থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা পর্যন্ত যে খরচ হয় তাতে করে বর্তমান বাজারদরে পাট বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন উপজেলার সাধারণ কৃষকরা।
দামুড়হুদা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ৭ হাজার পাটচাষিকে বীজ দেওয়া হয়েছে। পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও ৩ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে কম। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় আড়াইহাজার হেক্টর কম চাষ হয়েছে। দামুড়হুদার কয়েকটি এলাকায় আগাম পাটের চাষ করায় ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। অনেকের পাট বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। অনেক স্থানে পাটের আঁশ ছড়ানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তবে এর মধ্যে হঠাৎ করেই এ বছর পাটের বাজারমূল্য উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। বাজারে মণপ্রতি ১ হাজার ৮শ' টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাট। তবে পাটের আঁশের রং ভালো হলে দাম ২ হাজার ২শ' টাকা পর্যন্ত বেচা-কেনা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী আশরাফুল বলেন, বর্তমানে মণপ্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা। বাজার অনুযায়ী পাটের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা।
দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি গ্রামের পাটচাষি মো. জালাল বলেন, পাটঘরে তুলতে যে খরচ হয় তাতে করে বর্তমান দাম অনুযায়ী বিক্রি করলে খরচ ওঠানো যাচ্ছে না লোকসানে পড়তে হচ্ছে। কষ্টটাই বৃথা যায়। বাজারে দাম কমে গেলে আমাদের মতো কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা ফসল ঘরে তুলে মজুদ করতে পারি না। টাকার জন্য বিক্রি করতেই হয়। পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বড়বলদিয়া গ্রামের পাটচাষি আব্দুর রহমান বলেন, শুনছি সামনে আরও কমবে পাটের দাম। দাম কমতে থাকলে লোকসান গুনতে হবে। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের হুদাপাড়া গ্রামের সামাদ আলী বলেন, পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কম হওয়ায় বিক্রি করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। মজুদ করার মতো জায়গাও নেই আমাদের। আগামী ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করতে পাট বিক্রি করতেই হচ্ছে তাদের। তবে পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাম কম পেয়ে মজুদ করতে পাট কিনছেন বলেও জানা গেছে। দাম বাড়লে তখন বিক্রি করবেন তারা। উপজেলার অনেক স্থানেই পাট তুলে জমিতে ধানের চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। উঁচু স্থানের জমির পাট কেটে জাগ দেওয়া এবং আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে।
দামুড়হুদা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, এ উপজেলার আবহাওয়া পাটচাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এ কারণে প্রতি বছরই এখানে পাটের ফলন ভালো হয়। চলতি বছরও ভালো ফলন হয়েছে। আমরা কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। বাজারে পাটের দাম কিছুটা কম তবে পাটের দাম বাড়লে কৃষকদের সন্তুষ্টি।