কুলাউড়ায় মিথ্যা অভিযোগে চাকরি হারিয়ে ১৫ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন!

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা রাবার বাগানের টেপিং সুপারভাইজার শামীম আহমদ চাকরি হারিয়ে গত ১৫ বছর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাগানের শ্রমিক লীগের করা মিথ্যা অভিযোগে ২০০৯ সালে চাকরি হারিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি গড়ায় শ্রম আদালতে। শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনাল শামীমকে চাকরিতে স্বপদে বহালসহ বেতনভাতাদি প্রদানের নির্দেশ দিলেও সেই রায় বাস্তবায়ন হয়নি আজও। জানা যায়, উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে শামীম আহমদ ১৯৮৩ সালে ভাটেরা রাবার বাগানে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০০২ সালে তিনি রাবার বাগানের জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া রাবার বাগান শ্রমিক কর্মচারী ট্রেড ইউনিয়নের দুইবার সধারণ সম্পাদক ও দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে ট্রেড ইউনিয়ন সিলেট জোন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বাগানের টেপিং সুপারভাইজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষামতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট শ্রমিকলীগ তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক তরফা তদন্ত করে ২২ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আত্মপক্ষ সমর্থন করে আবেদন করায় কর্তৃপক্ষ তাকে আবার চাকরিতে পুনর্বহাল করে। অভিযোগের পাশাপাশি শ্রমিক লীগ নেতারা শামীম আহমদের উপর হামলা চালায় এবং কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে বাধা দিতে থাকে। এ বিষয়ে শামীম মৌলভীবাজার জজ আদালতে মামলা (নং ২৮/১০) করেন। আদালত বাগানের মহাব্যবস্থাপক, সহব্যবস্থাপক ও প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। মামলা করায় ২০১০ সালের ১৭ মে শামীম আহমদকে আবারও সাময়িক বরখাস্ত এবং ১৫ জুলাই স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়। অফিস থেকে স্থায়ী বরখাস্তের এই আদেশের বিরুদ্ধে শামীম চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে একটি মামলা (নং ৯/১০) করেন। দীর্ঘ ৯ বছর মামলা চলার পর ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটি খারিজ করেন। পরে শামীম শ্রম আপিল ট্রাইবু্যনালে আপিল মামলা (নং ২২৫/১৮) করেন। আদালত ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল আপিল মঞ্জুর করে চাকরিতে যোগদান এবং বকেয়া বেতনভাতা প্রদানের নির্দেশ দেন। আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে শামীম ২৪ এপ্রিল ভাটেরা রাবার বাগানে যোগদানপত্র জমা দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আদালতের রায় বাস্তবায়নে আজও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ভুক্তভোগী শামীম আহমদ জানান, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে চাকরি হারিয়ে গত ১৫ বছর থেকে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আদালতের রায় বাস্তবায়ন এবং চাকরি ফিরে পেতে চান। চাকরিরও মেয়াদ বেশিদিন না থাকায় তিনি তার ন্যায্য বেতন-ভাতা পেয়ে সম্মানের সঙ্গে অবসরে যেতে চান।