আনারসের রাজধানী খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুরে এবার আনারসের ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। স্থানীয় বাজারে জমে ঊঠেছে আনারস বেচাকেনা। তবে আনারসের ভালো ফলন পেয়েও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ স্থানীয় চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো গেলেও এখন আনারসের দামের সূচক নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। পরিবহণ বৃদ্ধিসহ স্থানীয় বাইক খরচ বেড়ে যাওয়ায় দূরের পাইকার ক্রেতা কমেছে। ফলে বাজারে প্রচুর আনারসের আমদানি থাকলেও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকাররা বলছেন মোকামগুলোতে তুলনামূলকভাবে চাহিদা কমে যাওয়ায় দামও কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আনারসের দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
মধুপুর গড়ের জলছত্র হচ্ছে আনারসের সবচেয়ে বড় বাজার। এছাড়াও মোটের বাজার ও গারো বাজারও আনারস বেচাকেনার জন্য বড় বাজার। এসব বাজারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকার আসেন আনারস কিনতে। এ বছর ভরা মৌসুমে পাইকার অনেকটাই কম। আশপাশের ময়মনসিংহ জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ঢাকা, গাজীপুরের কিছু পাইকার আসেন। অথচ এ বছর মৌসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার আসত। দামও ভালো ছিল বলে জানালেন আনারস বিক্রেতারা।
জলছত্র বাজারে গিয়ে কথা হয় আনারস নিয়ে আসা ভ্যান চালক শাহীনের সঙ্গে। তিনি জানান, গত দিন ধরে বাজার মন্দা যাচ্ছে। যে আনারস কয়েক দিন আগে পিস প্রতি ৪০ টাকা বিক্রি হতো, এখন সেইটা ৩০ টাকা। পাইকার কম থাকায় এমন হচ্ছে বলে তার ধারণা।
সুরুজ আলী জানান, আনারসের একটি চারার দাম ৪-৫ টাকা, রোপণ খরচ এক টাকা, পাতার ঢাক খরচ, নিড়ানি, সার, কীটনাশক, রোদে পোড়া থেকে রক্ষার ঢাক, পাকানো, কর্তন, পরিবহণ খরচ নিয়ে ১৫-২০ টাকা পড়ে যায়।
শামসুল হক জানালেন, যেখানে ছোট ট্রাকের ভাড়া ছিল ৫-৬ হাজার টাকা, এখন ৭-৮ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধি ও ক্রেতা কমে যাওয়াকে আনারসের দাম কমার কারণ মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
গারো বাজারের সাজ্জাদ রহমান জানান, গণমাধ্যমে আনারসের ক্ষতিকর দিক মেডিসিন প্রয়োগ ও নানা দিক প্রচারসহ আরও কিছু কারণে বর্তমানে আনারসের দাম নেমে এসেছে। যে আনারসের দাম ছিল ৩০ টাকা সেই আনারস এখন বাজারে ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শোলাকুড়ি ট্রাক চালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন জানান, এ সময়ে গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, স্থানীয় পরিবহণ খরচ বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ বেশির কারণে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নী জানান, ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে মধুপুরে ৬ হাজার ৪৭৯ হেক্টর জমিতে আনারস আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৪ হেক্টরে জলডুগি এবং ৬ হাজার ১২৫ হেক্টরে ক্যালেন্ডার প্রজাতির আনারস আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে এমডি-টু জাতের আনারস আবাদ শুরু হয়েছে।