বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বেতন বন্ধ, বিপাকে যশোরের ৬ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা

ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষা প্রকল্প (পিইডিপি-৪)
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
  ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বেতন বন্ধ, বিপাকে যশোরের ৬ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা

যশোরে ঝরেপড়া শিশুদের নিয়ে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) ছয় শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা গত সাত মাস ধরে বেতন বঞ্চিত রয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি জেলার ৫৬৬টি শিখনকেন্দ্রে চালু রাখতেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থাকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নত অর্থ ছাড় করার জন্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে শতভাগ শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। (পিইডিপি-৪) এর মূল লক্ষ্য প্রাক-প্রাথমিক হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিদ্যালয়গামী শিশুর একীভূত, সমতাভিত্তিক মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। এরই সাব কম্পোনেন্ট ২.৫ এর আউট-অব-স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম। যার মূল লক্ষ্য প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয় বহির্ভূত (ঝরেপড়া এবং ভর্তি না হওয়া) ৮-১৪ বছর বয়সি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মূল ধারায় নিয়ে আসা। যশোর জেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করে দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থা।

দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, যশোরের ৮টি উপজেলায় এবং যশোর পৌরসভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২১ সালে জেলার ৫৬৬টি শিখনকেন্দ্রে ১৬ হাজার ৯৮৫ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮৯৪ জন শিক্ষার্থীকে মূল ধারায় সংযুক্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৩ হাজার ৯১ জন শিক্ষার্থী ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। প্রকল্পে বর্তমানে ৫৬৬ জন শিক্ষক, ৪২ সুপারভাইজার, ১০ উপজেলা ম্যানেজার ও ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বমোট ৬৩৬ জন কর্মরত রয়েছেন।

দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থার বাস্তবায়নকৃত আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচিতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বু্যরো শিক্ষকদের বেতন, শিখন কেন্দ্রের জন্য ঘর ভাড়া, সুপারভাইজার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বরাদ্দ সরাসরি বু্যরো দিয়ে থাকে।

প্রকল্পের যশোর পৌরসভার ম্যানেজার শাহাফুর বখতিয়ার জানান, যশোর পৌরসভায় তাদের ৬১টি শিখন কেন্দ্র চালু রয়েছে। কেন্দ্রগুলোর শিক্ষক বা সুপারভাইজাররা অ্যাকাউন্টপেয়ি চেকের মাধ্যমে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পেয়েছেন। এরপর আর কোনো অর্থছাড় হয়নি। ফলে সংস্থা থেকে শিখন কেন্দ্রের ঘরভাড়াসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানো হলেও শিক্ষক-কর্মকর্তারা বেতনবঞ্চিত রয়েছেন।

যশোর পৌরসভার শিখন কেন্দ্রের শিক্ষক খালেদা আক্তার বলেন, দীর্ঘ ৭মাস বেতন না পাওয়ার তারা অমানবিক অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। আত্মীয়স্বজনও আর টাকা ধার দিচ্ছে না। খুব কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে।

যশোর পৌরসভার প্রোগ্রাম সুপারভাইজার জেসিয়া নাসরিন বলেন, এই চাকরিই তার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু গত ৭ মাস বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

যশোর পৌরসভার মোলস্নাপাড়া বাঁশতলা শিখনকেন্দ্রের শিক্ষার্থী রাতুল শেখ জানায়, 'আমরা আগে প্রতি মাসে খাতা পেতাম, এখন দুই মাসে একবার খাতা পাচ্ছি। এতে আমাদের একটু সমস্যা হচ্ছে।'

অপর শিক্ষার্থী রাফিয়া জানায়, 'আমরা বছরে একবার ড্রইং খাতা ও রং পেন্সিল পাই, ফলে ইচ্ছে মতো ছবি আঁকতে পারি না। প্রতি বছর অন্তত ২বার ড্রইং খাতা ও রং পেন্সিল পেলে আমরা ইচ্ছেমতো ছবি আঁকতে পারতাম।'

তবে আরেক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান জানায়, কেন্দ্রে অনেকেই উপবৃত্তির টাকা পেলেও আমি উপবৃত্তির টাকা পাইনি।'

এ বিষয়ে জেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, শুধু সদর উপজেলা নয়, যশোর পৌরসভাসহ জেলার ৮টি উপজেলার এক হাজার ২৯২ জন উপবৃত্তি না পাওয়া শিক্ষার্থীর তালিকা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষা বু্যরোতে পাঠানো হয়েছে এবং সরকারিভাবে তালিকা সংশোধন করা হচ্ছে।

যশোর জেলায় প্রকল্পটির বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত লিড অর্গানাইজেশন দিশা সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাহিমা সুলতানা জানান, সুচারুরূপে কার্যক্রমটি সম্পন্নের জন্য দ্রম্নত অর্থ ছাড় হওয়া প্রয়োজন।

যশোর জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বু্যরো'র সহকারী পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাস বলেন, বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী যশোর জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সব উপজেলায় আইভিএ (স্বতন্ত্র যাচাই কমিটি) রিপোর্ট অনুযায়ী কেন্দ্র চলমান রয়েছে। তবে ডিসেম্বর'২৩ এর পর আর কোনো অর্থছাড় হয়নি। প্রকল্পের সফল সমাপ্তি ও সব শিক্ষার্থীকে মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রকল্পটি ৩০ জুন-২০২৫ পর্যন্ত চলমান রাখা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে