বরিশালে ৭ দফা দাবিতে অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মাসিক বেতন ফিক্সড করা ও বোনাসসহ ৭ দফা দাবিতে শনিবার সকাল ৬টা থেকে বরিশাল নগরীর গ্যাস্টারবাইন এলাকায় দপদপিয়া ফেরিঘাট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর, বাম রাজনৈতিক নেতা ও অপসোনিন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করে কারখানায় ফিরে যান।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল হতেই অপসোনিন ফার্মার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে অবরোধ করে পস্নাকেটে লিখে নানা দাবি জানান। এ সময় তারা কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা বিষয়ে সেস্নাগান দেন। এক পর্যায় অপসোনিনের একজন ম্যানেজার তাদের সঙ্গে কথা বলতে এলে তারা ভুয়া ভুয়া বলে তাকে তাড়িয়ে দেন। বিক্ষোভের এক পর্যায় তারা দপদপিয়া সেতুর টোল পস্নাজা আটকে দিলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে যান স্থানীয় কাউন্সিলর ফিরোজ হোসেন, বাসদ'র জেলা সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী ও অপসোনিনের কয়েক কর্মকর্তা। তারা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে দুপুর ১টায় শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে কারখানায় ফিরে যান।
আন্দোলনকারী শ্রমিক সোহাগ ও রোমান বলেন, 'অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের শ্রমিকদের মাসে ৫-৬ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। আমরা সবাই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। নিজেদের খরচ মিটিয়ে এই অল্প টাকা দিয়ে কোনো শ্রমিকের পরিবার-পরিজনসহ চলা সম্ভব নয়। বিগত সময় আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারিনি। নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো শ্রমিক কথা বললে তাকে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হতো। আজকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সময় হয়েছে। তাই আমরা শ্রমিকরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সড়কে নেমেছি। আমাদের দাবি না মানলে পরে কারখানা অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।'
শ্রমিকদের ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের মাসিক বেতন ফিক্সড করে ১২ হাজার টাকা দিতে হবে এবং সরকারি ছুটির জন্য কোনো বেতন কাটা যাবে না। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার অধিক কাজ করলে (ওভারটাইম) প্রতি ঘণ্টায় দ্বিগুণ মজুরি দিতে হবে। ১২ ঘণ্টা কাজ করলে নাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ৬ মাস পর কাজ অনুযায়ী চাকরিতে পার্মানেন্ট করতে হবে। পুরনো শ্রমিকদের যারা অনেক বছর ধরে চাকরি করে তাদের নতুন ইনক্রিমেন্ট স্কেল বেতনের সঙ্গে যোগ করতে হবে। প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট স্কেল ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা করতে হবে। বছরে ২ বার বেতনের ৫০% বোনাস দিতে হবে। কাজ চলাকালে কোনো দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার দায়িত্ব কোম্পানির বহন করতে হবে। শ্রমিকের চাকরিতে নিয়োগের পর নিয়োগপত্র এবং পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। আন্দোলনে জড়িত কোনো শ্রমিককে হয়রানি, ভোগান্তি ও হেনস্তা বা চাকরিচু্যত করা যাবে না। যদি ভুলত্রম্নটি হয় সংশোধনের জন্য সময় দিতে হবে এবং শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে।