পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ও জমি সংক্রান্ত বিরোধে তিন জেলায় তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বরিশাল, পাবনার চাটমোহর ও বগুড়ার ধুনটে তিন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করার হয়। এদিকে ধুনটে আত্মহত্যায় একজন ও টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে মাদ্রাসা ছাত্রের মৃতু্য হয়েছে। আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
বরিশাল অফিস জানিয়েছে, বরিশালের গৌরনদী ?উপজেলায় রাশেদ সিকদার (২৪) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্বজনরা। টাকা ধার না দেওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে মারধর করে। শনিবার ভোরে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
মৃতের স্বজনদের বরাত দিয়ে ওসি জানান, উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড় দুলালি গ্রামের কামাল সিকদারের ছেলে রাশেদ সিকদারের কাছে কয়েকজন আত্মীয় টাকা চান। তবে সেটি ধার বাবদ না চাঁদা বাবদ সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। টাকা না পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাশেদের আত্মীয় হামিম ও আল আমিনসহ কয়েকজন তাকে মারধর করেন। আহত রাশেদকে প্রথমে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ও পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। পরে নিহতের ভাই রাসেল সিকদার বাদী হয়ে হামিম ও আল আমিনসহ ৫ জনকে আসামি করে শনিবার সকালে থানায় হত্যা মামলা করেন।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনার চাটমোহরে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হেলাল প্রামাণিক (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এতে আহত হয়েছেন আরও তিনজন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের সোহাগবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হেলাল সোহাগবাড়ী গ্রামের মোহাম্মদ আলী প্রামাণিকের ছেলে। আহতরা হলেন আব্দুল ওয়াহেদ প্রামাণিক, বাবলু প্রামাণিক ও আবু মাজন প্রামাণিক। তারা নিহত হেলাল উদ্দিনের ভাই।
জানা যায়, তিন মাস আগে একই গ্রামের গুদু প্রামাণিকের ছেলে সাইদুল ইসলামের কাছে জমি কেনেন আজাদ হোসেনের ছেলে খলিল হোসেন ও এলবাজ প্রামাণিকের ছেলে জিয়া প্রামাণিক। কিন্তু সাইদুল সেই জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে তালবাহানা করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের বিরোধ চলছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে কথা কাটাকাটির জেরে খলিলকে অভিযুক্ত সাইদুল ও তার চাচাত ভাই জামাত আলী মারধর করে। হেলালের ভাই আব্দুল ওয়াহেদ প্রামাণিক সাইদুলকে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে বলেন। পরে সাইদুল তার দুই ভাই নুর হোসেন, শাহ আলম, চাচাত ভাই জামাত আলীসহ লোকজন নিয়ে ওয়াহেদের বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধর করে। এ খবরে বাজারে থাকা ওয়াহেদের ভাই হেলাল, বাবলু ও আবু মাজন নুর হোসেনের বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। তখন সাইদুল, নূর হোসেন, শাহ আলমসহ অন্যরা তাদের চার ভাইকে ধারাল অস্ত্রাঘাত করে। তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক হেলালকে মৃত ঘোষণা করেন। চাটমোহর থানার ওসি সেলিম রেজা বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পরিদর্শন করেছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার ধুনটে জমি দখল করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় সবুজ মিয়া (২৬) নামে যুবক নিহত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। নিহত সবুজ উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের গজিয়াবাড়ী গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয়াভ জানায়, ওই গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে সবুজ মিয়া ও শফিকুল ইসলামের সঙ্গে একটি জমি নিয়ে একই গ্রামের মৃত শামছুল হকের ছেলে আবুল কালামের বিরোধ চলে আসছে। গত দুই বছর আগে ওই জমিটি দখলে নেয় আবুল কালাম।
বৃহস্পতিবার সবুজ ও শফিকুল জমিটি আবার দখল করতে গেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এতে সবুজ, তার ভাই শফিকুল, বোন জামাই আফসার আলী ও তার স্ত্রী নুরজাহান খাতুন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করে। পরে সবুজের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সবুজ মিয়ার মৃতু্য হয়।
ধুনট থানার ওসি সৈকত হাসান বলেন, মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে শিহাবুল ইসলাম (৩০) বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছেন। শুক্রবার দুপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়।
প্রতিবেশীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে গ্যাস ট্যাবলেট খান শিহাবুল। তাকে বগুড়ায় ভর্তি করা হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তার মৃতু্য হয়।
সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুরে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়ে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসান মাহমুদ (১০) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্র মারা গেছে। শনিবার সকালে পৌরশহরের দারুল উলুম নুরুন হারামাইন মাদ্রাসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হাসান মাহমুদ স্থানীয় ওসমান আলীর ছেলে এবং ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।