একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা সোহেলের পরিবার
প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি
'আমার ছেলের রোজগারের টাকায় আমাদের পরিবার চলত। আমার ছেলেকে ঢাকায় পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলল, এখন আমাদের কী হবে, আমরা কী খেয়ে বেঁচে থাকব।' কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন ঢাকায় কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত কলেজছাত্র সোহেল রানার মা মাবিয়া বিবি।
সংসারের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিল সোহেল। সোহেলকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশেহারা। বুধবার দুপুরে মাবিয়া বেগমের বাড়িতে গেলে কথা হয় তার সঙ্গে। এর আগে গত ৫ আগস্ট কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়।
নিহত সোহেলের মা মাবিয়া বিবি বলেন, 'আমার স্বামী বৃদ্ধ মানুষ বড় এক ছেলে আছে সেও বেকার অভাবের সংসার সোহেলের রোজগারে কোনো রকম সংসার চলত। অভাবের কারণে আমার ছেলে ঢাকায় চাকরি করে আমাদের সংসার চালাত।
তিনি আরও বলেন, 'আমার ছেলে কাহালু কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় ছোট একটি কোম্পানিতে চাকরি করত। আমার ছেলেটা দেশের জন্য লড়তে গিয়েছিল সবার সঙ্গে আন্দোলন করছিল আমার সোনা মানিকটার বুকটা পুলিশ গুলি করে ঝাঝরা করে দিয়েছে। আমার ছেলে কি দোষ করেছিল।
আমার ছেলে ঢাকায় চাকরি করে টাকা পাঠাত সেই টাকা দিয়ে আমার পরিবার চলত। আমার ছেলে অনেক কষ্ট করে আমাদের টাকা পাঠাত। এখন কে টাকা পাঠাবে সংসার চলবে কি করে।
আমার ছেলেটা মারা যাওয়ার কারণে তার বাবা মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনোরকম আমাদের জীবনটা চলছে। আমাদের মুখে একমুঠো আহার তুলে দেওয়ার সম্বল ছিল আমার কলিজা সোহেল। আমি সেই ছেলেকে হারিয়ে ফেললাম দেশের জন্য জীবন দিল।'
নিহত সোহেল রানা (৩০) বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫নং ভাগ্রাম ইউনিয়নের ভুস্কুর গ্রামের ফেরদৌস রহমানের ছেলে। সোহেল ঢাকা রায়েরবাগে থেকে ছোট একটা কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে কোম্পানি বন্ধ থাকায় সবার সঙ্গে আন্দোলনে বের হয়েছিল সোহেল, কিন্তু বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের গুলি সোহেলের বুকে এসে লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় তার মৃতু্য হয়। পরের দিন সোহেলকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সোহেলের পরিবারের দাবি, যেহেতু সোহেল বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে গিয়ে নিহত হয়েছে তাই সরকার থেকে যদি তাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হয় তাহলে তাদের পরিবার দু'মুঠো খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবে। এ ছাড়া এলাকাবাসী আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, নিহতের পরিবার আর্থিক সহায়তার জন্য যদি আবেদন করে তাহলে অবশ্যই ওই পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।