৩ টাকার 'বাচ্চা সিঙ্গারা' বিক্রি করে দিনে হাজার টাকা আয়

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের মালেক মোল্যার ছেলে মো. ইয়াছিন মিয়া। চার ভাই-বোনের মধ্যে বড়ভাই আব্দুর রহমান নিজ মালিকানাধীন জিপগাড়ি ভাড়ায় চালান। আর মেজভাই রবিউলও ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসের চালক। ছোটভাই মামুন কৃষিকাজ করেন। এক মাস বয়সি এক সন্তানের জনক ইয়াছিন মিয়া বোয়ালমারী পৌর সদরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ৩ টাকার সিঙ্গারা বিক্রি করেন। ইয়াছিন মিয়ার ভাষায় 'বাচ্চা সিঙ্গারা'। সিঙ্গারা বিক্রির সময় তিনি কিছু সময় থেমে থেমে 'বাচ্চা সিঙ্গারা' আছে, 'বাচ্চা সিঙ্গারা' বলে ওঠেন। সঙ্গে কিছু বড় সিঙ্গারা থাকলেও তা খুব একটা বিক্রি হয় না। তবে ছোট সিঙ্গারার সঙ্গে তিন টাকার সমুচাও বিক্রি করেন। কিন্তু ৩ টাকার সিঙ্গারারই চাহিদা বেশি। একান্নবর্তী সংসারে সাংসারিক ব্যয়ে ইয়াছিন মিয়ার অবদান কম নয়। সিঙ্গারা বিক্রি থেকে অর্জিত আয়ে বেশ খুশি তিনি। ৩২ বছর বয়সি ইয়াছিন মিয়া একটি মাঝারি সাইজের কাঠের বাক্সের ওপর একটি কাঁচের ঘর বানিয়ে তাতে ভ্যানগাড়ির দুটি চাকা লাগিয়ে ঠেলাগাড়ি সদৃশ একটি গাড়ি বানিয়েছেন। আর কাঁচের ঘরের মধ্যে সিঙ্গারা রাখায় ধূলাবালিমুক্ত থাকে। প্রতিদিন ১১০০-১২০০ পিস ছোট সিঙ্গারা বিক্রি হয়। ওই পরিমাণ সিঙ্গারা তৈরি করা ইয়াছিনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাকে সহযোগিতা করেন ছোটভাই মামুন (২৮) ও মা সাহেরা (৬০)। বাড়ি থেকে সিঙ্গারা তৈরি করে বোয়ালমারী বাজারের তালতলা, মহিলা কলেজের সামনে, হাসপাতালের সামনে, চৌরাস্তাসহ পৌর সদরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। ইয়াছিন মিয়া বলেন, 'প্রতিদিন ১১০০-১২০০ পিসের মতো সিঙ্গারা বিক্রি করি। প্রতি পিস ৩ টাকা। এতে খরচ বাদ দিলে ১৩০০-১৪০০ টাকার মতো লাভ থাকে। সকাল ১০টা থেকে বেচা শুরু করে দুপুর ৩টার মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়।' তিনি আরও বলেন, 'দেড় মাস ধরে এই সিঙ্গারা, সমুচা বিক্রি করছি। আগে তিন বছর হাসপাতালের সামনের এক হোটেলে সিঙ্গারা বানাতাম। পরে ওই হোটেলের কাজ ছেড়ে এখন ঠেলাগাড়িতে করে সিঙ্গারা, সমুচা বিক্রি করি। বড় সাইজের কিছু সিঙ্গারা আর সমুচা থাকলেও ছোট সিঙ্গারার চাহিদা বেশি। এ ব্যবসায় এখন অনেক ভালো আছি।' স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মুকুল কুমার বসু বলেন, 'ইয়াছিন মিয়ার একটি সিঙ্গারার দাম মাত্র তিন টাকা। অথচ খেতে সুস্বাদু। আমি মাঝেমধ্যে ওই সিঙ্গারা পেলেই খাই। সাধারণত হোটেলগুলোয় যে সিঙ্গারা বিক্রি হয়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উন্মুক্ত স্থানে থাকে। এতে ধূলাবালি ও মাছি পড়ে। আর ইয়াছিন মিয়ার সিঙ্গারা কাঁচের ঘরের মধ্যে থাকায় মাছি পড়ে না এবং ধূলাবালিমুক্ত। সেদিক থেকে বলতে গেলে ইয়াছিন মিয়ার বাড়িতে তৈরি সিঙ্গারা স্বাস্থ্যকরই বটে।'