বিগত কয়েক বছর যাবৎ সুনামগঞ্জের হাওড় কেন্দ্রিক পর্যটনের অনেক বড় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা হাওড় দেখতে আসছে দলে দলে। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার আগ্রহ বাড়ছে দেশের মানুষের। সঙ্গে শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী, বারিক্কা টিলা এবং টাকের ঘাট নামক স্থান পর্যটন হিসেবে ঘুরে ফিরে দেখেন পর্যটক পিপাসুরা।
সুনামগঞ্জকে বাংলাদেশের সামনে নতুন করে উপস্থাপন করছে এসব প্রকৃতিক দৃশ্য। হাওড় ভ্রমণ হালের ভ্রমণ পিপাসু তরুণদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ সুনামগঞ্জকে ভালোবেসে, সুনামগঞ্জের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলার কাশ্মির নামেও ডাকেন। সীমান্তের পাহাড়, হাওরের ঢেউ, যাদুকাটা নদী, নীলাদ্রি-প্রকৃতির হেঁয়ালিপনা এ অঞ্চলকে বিধাতা যেন নিজ হাতে সাজিয়েছেন।
সে তুলনায় পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আ. সালাম বলেন, 'হাওড়ের পাড়ে বাড়ি হওয়ায় হাওড় অঞ্চলের সংকট ও সম্ভাবনা ছোটবেলা থেকে দেখে বড় হয়েছি। সুনামগঞ্জের হাওড়কেন্দ্রিক পর্যটনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, আমার মনে হয় তাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কিছু বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও নতুন উদ্যোগ নেওয়া সুনামগঞ্জের হাওড় অঞ্চলের জন্য খুব জরুরি।'
টাঙ্গুয়ার হাওড়সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাওড় যেহেতু তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় রয়েছে, সুতরাং এসব হাওড়ে যারা ভ্রমণে আসেন তাদের থাকার সুব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট এলাকায় করতে পারলে ভালো হয়। বিশেষ করে তাহিরপুর ও মধ্যনগরে সরকারি উদ্যোগে বড় ধরনের 'টুরিস্ট গেস্ট হাউজ' নির্মাণ করা খুব জরুরি। পর্যটকদের যদি নিরাপদে সরকারি ভবনে বিনামূল্যে নূ্যনতম থাকার ব্যবস্থাটা করে দেওয়া যায় তাহলে এ অঞ্চল ভ্রমণের প্রতি দেশের নানা প্রান্তের মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ। তাহিরপুর, মধ্যনগরে পর্যটকদের জন্য সরকারি গেস্ট হাউস নির্মাণ খুব জরুরি।
হাওড় অঞ্চলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ প্রশাসনকে সক্রিয় রাখা খুবই জরুরি। হাওড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য রিজার্ভ ট্রলারসহ পরিবহণের ভাড়াটা প্রশাসন কর্তৃক নির্দিষ্ট করে দেওয়া অবশ্যই জরুরি। হাওড় অঞ্চলের শিক্ষিত তরুণরা বিশেষ করে যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে পড়াশোনা করে, তারা হাওড় অঞ্চলে পর্যটনের সম্ভাবনা প্রচারে প্রতিটি তরুণ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডার হিসেবে কাজ করতে পারে।
প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতি বছর বর্ষার বিশেষ কোনো দিনে হাওড় অঞ্চলে একটি 'হাওড় উৎসব'র আয়োজন করা যেতে পারে। যেখানে হাওড়ের শিল্প সংস্কৃতি ইতিহাস-ঐতিহ্য মানুষের জীবনধারা তুলে ধরা যাবে।
এসব উদ্যোগ প্রশাসন থেকে নিলে বাংলাদেশে হাওড় অঞ্চলের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বাড়বে। হাওড়ের সংকট ও সম্ভাবনার বিষয়ে দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং গণমাধ্যমের আন্তরিকতা খুব বেশি প্রয়োজন।
অদূর ভবিষ্যতে হাওড়াঞ্চলের (সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট) জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো হাওড়াঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা খুব জরুরি।
আগামী দিনে সুনামগঞ্জের হাওড় অঞ্চল বাংলাদেশের পর্যটন খাতে অনেক বড় সম্ভাবনার নাম হবে। হাওড় অঞ্চল নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা এবং কার্যকর উদ্যোগ এ অঞ্চলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। হাওড়ের অর্থনীতি ও জীবনমান উন্নয়নে পর্যটন নিঃসন্দেহে একটা বড় সুযোগ, একটা বড় সম্ভাবনার নাম।