টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিদাস-বহুরিয়া চতলবাইদ সড়কের কাঁকড়ার খালে সেতু নির্মাণের এক বছরের কাজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী লোকজনকে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পায়ে হেঁটে ও মোটর সাইকেল যোগে চলাচলের জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগে ওই খালে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছিল, যা বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী।
স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা এলজিইডির কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার কালিদাস-বহুরিয়া চতলবাইদ সড়কের করটিয়াপাড়া এলাকায় কাঁকড়ার খালে গত ১০ বছর ধরে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয়রা। সেই দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের শক্তিশালীকরণ প্রকল্প ও উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায় সেতুর নির্মাণকাজ ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রম্নয়ারি শুরু হয়। ২ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৩১ টাকা ব্যয়ে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পিএসসি গার্ডার সেতুটির কাজটি পান মেসার্স মাইন উদ্দিনবাসী নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজটি ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রম্নয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র কয়েক মাস কাজ করে অজ্ঞাত কারণে ফেলে রেখে উধাও হয়ে যায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দাবি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথম দফায় ২০ ভাগ কাজ শেষ করেছিলেন। এরপর দুই বছর ধরে তাদের কোনো খোঁজ ছিল না। কয়েক মাস আগে ওই ঠিকাদার কিছু শ্রমিক নিয়ে এসে দুই সপ্তাহ কাজ করে আবার উধাও হয়ে যায়। আবার দ্বিতীয় দফায় তাগিদ দেওয়ার পর এখন ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
তবে গত সোমবার সরেজমিন ওই কাঁকড়ার খালে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন পিএসসি গার্ডার সেতুটির দুই পাশের পিলারগুলো শুধু দাঁড় করানো হয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশ দিয়ে সাময়িকভাবে পায়ে হেঁটে ও মোটর সাইকেল চলাচলের জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছিল, যা বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেতু নির্মাণের সময় মানুষ ও যান চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে পার্শ্ব রাস্তা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। যার ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
করটিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ঠিকাদার চলে যাওয়ায় যাতায়াতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ওই এলাকার উৎপাদিত কাঁচামাল উপজেলা ও জেলা শহরে নেওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনের তাগিদে ১০-১৫ কিলোমিটার ঘুরে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে।
স্থানীয় বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরে আলম মুক্তা বলেন, ওই সড়ক ব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদে উপকারভোগী। এ রাস্তায় আসা-যাওয়া করতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রম্নত ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানান।
ওই রাস্তায় চলাচলকারী হতেয়া ডিএস দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. রেজাউল করিম বলেন, 'সখীপুর উপজেলা শহর থেকে চতলবাইদ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার দুই লেনের নতুন সড়কটি চকচকে ঝকঝকে। অথচ সাড়ে তিন বছরেও সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় আমরা চরম কষ্টে আছি। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেতুটি সময়মতো নির্মাণ না হওয়ায় ওই সড়ক দিয়ে বাস, ট্রাকসহ কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না। এতে মানুষ প্রতিদিন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।'
মেসার্স মাইন উদ্দিনবাসী নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোহাম্মদ লিটন মিয়া বলেন, 'ব্যবসায়িক নানা অসুবিধার কারণে আমি কাজটি শুরু করেও শেষ করতে পারিনি। এজন্য স্থানীয়দের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে।'
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'গত দুই বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে। কাজটি বাতিলের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত জানুয়ারির আগেই কাজটি শেষ করে দেবেন বলে আমাদের প্রতিশ্রম্নতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা প্রতিশ্রম্নতি রক্ষা করতে পারেননি। অনেক তাগিদ দেওয়ার পর কিছু কাজ করেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে তাদের আবার দেখা যাচ্ছে না। তারা যাতে দ্রম্নত সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ করে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'