আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনের দাবিতে ঢাকায় মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সোমবার দুপুরে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান আদিবাসীরা।
সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনে সমতলের আদিবাসীদের দাবি দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন হলে এ সরকারের কাছেও সেই দাবি-দাওয়া জানাচ্ছেন তারা।
সমাবেশে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্য ফারহা তানজিম তিতিল বলেন, 'সংখ্যালঘু শব্দ একটি বৈষম্যমূলক শব্দ। সংখ্যা দিয়ে মানুষকে বিচার করা যাবে না। আদিবাসী কিংবা প্রান্তিক মানুষ প্রত্যেককে তার সকল নাগরিক অধিকার এবং মর্যাদা দিতে হবে।'
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রভাত টুডু বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি হলো- সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন। দেশের আদিবাসীদের ওপর ঘটে যাওয়া সব হত্যা, ধর্ষণ ও উচ্ছেদের সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে।'
লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, 'বাংলাদেশ বহুত্ববাদী দেশ। এ দেশে বাঙালি ছাড়াও বহু ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের বসবাস। বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের হত্যার বিচার করতে হবে। আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।'
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, 'সরকার বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের জন্য নানা প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে, কিন্তু প্রতিশ্রম্নতির বাস্তবায়ন ঘটেনি। আমরা আর কোনো প্রতিশ্রম্নতি চাই না, আমরা চাই বাস্তবায়ন।
তিনি আরও বলেন, 'নতুন যে বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছি, সেখানে সমতলের আদিবাসীদের বাদ দিয়ে কখনো সম্ভব নয়। বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারে সমতল থেকে একজন প্রতিনিধি রাখতে হবে।'
কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পলস্নব চাকমা বলেন, 'দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী আদিবাসীদের ওপর হুমকি ও হামলার ঘটনা ঘটছে। দিনাজপুরে সিধু কানুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা এ সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সমতার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। আদিবাসীদের সাংবিধানিক পরিচয়সহ ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠিত না করলে আদিবাসীরা আগের মতোই বঞ্চিত থেকে যাবে। এ বঞ্চনার অবসান হোক।'
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, 'ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত পঞ্চাশ বছরে সরকার বদল হলেও আদিবাসীদের ভাগ্যের বদল ঘটেনি। আমরা আদিবাসীদের সকল শোষণ ও বঞ্চনার অবসান চাই।'
সমাবেশ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে স্বৌপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে যান আদিবাসীরা। সোমবার মিছিল ও সমাবেশ হলেও আগামী শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত 'বৈচিত্র্যের কালচারাল শোডাউন' কর্মসূচি ঘোষণা করেন অলিক মৃ।