কাজে যোগ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা
প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
সারাদেশে পুলিশের 'আর নয় কর্মবিরতি, এবার হবে কাজের গতি' ও 'হয়ে গেছে সংস্কার, পুলিশ হবে জনতার'- স্স্নোগানে কাজে ফিরেছেন পুলিশ সদস্যরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে বিভিন্ন থানায় হামলা ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার ঘটনা ঘটে। এর ফলে নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতি পালন করে পুলিশ। দাবি পূরণের আশ্বাসে তারা আবার কাজে যোগদান করেছেন। আঞ্চলিক অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
খুলনা অফিস জানিয়েছে, খুলনা জেলা পুলিশ মেট্রোপলিট পুলিশ শিল্প পুলিশ নৌ-পুলিশ কাজে যোগ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। গত রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা নিজ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন। তবে এসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য নিজেদের এবং সরকারি সম্পত্তি ও অস্ত্র গোলাবারুদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় প্রকাশ করেন। তবে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক ছাত্র-জনতাকে মাঠে থেকে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে স্বল্পপরিসরে পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরলেও তারা সবাই ছিলেন পোশাকে। মেট্রোপলিটন ট্রাফিককে সকাল থেকে রাস্তায় কাজ করতে দেখা গেছে। খুলনা সদর থানার ওসি কামাল হোসেন ও তার দলীয় ফোর্সকে রাস্তায় ডিউটি করতে দেখা যায়। খুলনা শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার বলেন, 'আমরা সকল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় জনগণের কল্যাণে কাজ করছি।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, 'আমরা জনগণের পুলিশ, ছাত্র জনতার পুলিশ, আর নয় কর্মবিরতি, এবার হবে কাজের গতি। হয়ে গেছে সংস্কার, পুলিশ হবে জনতার।'
রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) এলাকায় ৬ থানা ও ট্রাফিক কার্যক্রম সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ পর প্রাথমিক পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়।
আরপিএমপিসহ একাধিক সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে মহানগর তাজহাট থানা, গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়, পুলিশ বক্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগসহ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এতে আরপিএমপি কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। এরপর সোমবার থেকে প্রাথমিকভাবে মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম শুরু হয়। সূত্রমতে, মহানগর এলাকার কোতোয়ালি, মাহিগঞ্জ, পরশুরাম, মাহিগঞ্জ, তাজহাট হারাগাছ থানাসহ ৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪০ জন ট্রাফিক পুলিশ নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়।
মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার সয়ফুজ্জামান ফারুকী জানান, স্বল্পপরিসরে ট্রাফিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছে শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি মহানগর এলাকার থানাগুলোয়ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে।
ময়মনসিংহ বু্যরো জানান, সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহে কর্মে ফিরেছে পুলিশ। সোমবার সকাল থেকে জেলার ১৪টি থানায় শুরু হয়েছে পুলিশের কার্যক্রম। মান-অভিমান ভুলে এক সপ্তাহ পর কর্মে ফেরায় পুলিশকে ফুল দিয়ে বরণ করে স্বাগত জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সোমবার নগরীর টাউন হল, নতুন বাজার মোড়, গাঙ্গিনারপাড় মোড়সহ প্রত্যেকটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ সময় তাদের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও সহযোগিতা করেন।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, 'আজ থেকে পুরোদমে জেলার ১৪টি থানার পুলিশ সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। এর আগে শনিবার প্রত্যেক পুলিশ সদস্য স্ব স্ব থানায় ফেরে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের কোনো ধরনের মতবিরোধ হয়নি।'
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, কয়েকদিনের বিরতির পর আবারো কাজে ফেরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে জেলা বিএনপি। সোমবার জেলা শহরের পৌর বাজারস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশ সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম। শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন পুলিশ সুপার মোকবুল হোসেনসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর, নীলফামারী থানার ওসি আবু সাঈদ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইজার উদ্দিন এবং ট্রাফিক বিভাগের প্রধান জ্যোতির্ময় রায়।
উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাহেদুল ইসলাম দোলন, পৌর বিএনপির সভাপতি মাহবুব উর রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ পারভেজ প্রিন্স ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মোজাম, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি নুর আলম ও সাধারণ সম্পাদক জামিয়ার রহমান, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি গোলাম মোস্তফা রঞ্জু প্রমুখ।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় অবস্থিত সদর পুলিশ ফাঁড়িতে সদর মডেল থানার কার্যক্রম ও মজমপুর গেটে ট্রাফিক পুলিশ সড়ক মহাসড়কে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। সোমবার মডেল থানার ওসি মাহফুজুল হক চৌধুরী পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন। এ সময় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন এসে পুলিশিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, মানুষ সাহায্য করছে। মডেল থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার চলছে, কিছু উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলো উদ্ধারের কাজ চলমান আছে। পুলিশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করবে, এতে জনগণের সহযোগিতা চান তিনি।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, পুলিশের কাজের গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ফরিদপুরে পুলিশ ও জনতার শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার ফরিদপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ ও ছাত্র-জনতা এ শোভাযাত্রা বের করেন। পরে প্রেস ক্লাবের সামনে পৌঁছলে তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ সংবাদকর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমদাদ হোসেন, শৈলেন চাকমা, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন খান পলাশ, সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল, এ কে কিবরিয়া স্বপন, বেনজির আহমেদ তাবরিজ প্রমুখ।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর সদর মডেল থানায় সীমিত পরিসরে পুলিশি সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল হতে থানার ওসিসহ সদস্যরা কাজে ফেরেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুহাম্মদ মুহসীন আলম।
ওসি বলেন, 'এই থানায় কর্মরত ডিউটি অফিসার এবং মোবাইল পেট্রোল পার্টি কাজ শুরু করেছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশি সেবা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ছিল। সীমিত পরিসরে পুলিশি সেবার কাজ শুরু করেছি।'
চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, অবশেষে রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানায় কাজে যোগদান করেছে পুলিশ। তারই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পাড়ায় মহলস্নায় হাটবাজারে জনসচেতনতা বাড়াতে মতবিনিময় শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ।
সোমবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মতবিনিময় করেন চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান।
ওসি জনগণকে উদ্দেশ করে বলেন, 'অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় থানার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু আজ থেকে জনগণের সেবায় আবারও পুলিশ দায়িত্ব শুরু করেছেন। আপনারা আপনাদের সব ধরনের অভিযোগ থানা পুলিশকে জানান এবং আমাদের সেবা গ্রহণ করুন।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে চারঘাট এখন শান্ত। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আপনারা পুলিশকে সহযোগিতা করুন। পুলিশ সব সময় জনগণের পাশে থেকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকবেন।'
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন, সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মহসিন আলী, থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মাসুদ পারভেজ, উপ-পরিদর্শক জিয়ারুল ইসলাম, মুক্তার হোসেনসহ সেনাবাহিনী ও মডেল থানা পুলিশ।