শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

সিজার করতে না চাওয়ায় মধ্যরাতে ক্লিনিক থেকে বের করে দিল প্রসূতিকে রাস্তার মধ্যেই বাচ্চা প্রসব

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
  ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সিজার করতে না চাওয়ায় মধ্যরাতে ক্লিনিক থেকে বের করে দিল প্রসূতিকে রাস্তার মধ্যেই বাচ্চা প্রসব

রাত তখন দেড়টা। প্রসূতির প্রসব বেদনার চিৎকারে হইচই পড়ে গেছে পুরো ক্লিনিক জুড়ে। তখনই ভর্তি থাকার পরও কেবল সিজার করতে অসম্মতি জানানোর কারণে তীব্র প্রসব বেদনাসহ ওই প্রসূতিকে চিকিৎসা না দিয়ে মধ্যরাতে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। এতে ক্লিনিক থেকে ১০০ মিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের গেট পর্যন্ত না যেতেই রাস্তার মধ্যে বাচ্চা প্রসব করেছেন প্রসূতি ওই নারী।

গত ১০ আগস্ট রাত ২টায় ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সংলগ্ন আকলিমা সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন ওই সেবা ক্লিনিকের আবাসিক ডাক্তার গাইনি ও সার্জারিতে অভিজ্ঞ ডা. রাবেয়া বসরী।

অভিযুক্ত প্রসূতি সালেহা বেগম (৩৬) উপজেলার পৌরশহরের মধ্য অরণকোলা (আলহাজ ক্যাম্প) এলাকার ব্যবসায়ী সামসুল হকের স্ত্রী।

প্রসূতির স্বামী সামসুল হক বলেন, ঘটনার দিন রাত ৮টায় তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে স্থানীয় আকলিমা সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরতরা প্রসূতিকে দেখে সিজারের কথা বলেন। কিন্তু প্রসূতির হৃদরোগ থাকায় এবং পূর্বে দুটি বাচ্চা স্বাভাবিক হওয়ায় তারা স্বাভাবিক ডেলিভারির অনুরোধ করেন। সবকিছু ঠিক করেই কর্তৃপক্ষ প্রসূতিকে ক্লিনিকে ভর্তি করান। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার, আয়া এবং দায়িত্বরতরা তাদের কৌশল বদলাতে থাকেন। রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে জানিয়ে দ্রম্নত সিজারের প্রস্তুতি নিতে বলেন। এতে বিতন্ডা বাধে স্বজন এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের। অবশেষে প্রসূতি এবং আগত নবজাতকের কথা চিন্তা করে সিজারের সম্মতি দেন পরিবার এবং ক্লিনিক থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সব ওধুষপত্র কেনেন তারা। তবে সবকিছু মেনে নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি প্রসূতির। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রসূতির প্রসব বেদনাও বাড়তে থাকে। সেই সুযোগ নিয়ে বেকে বসেন ডাক্তার রাবেয়া বসরি। রাত তখন দেড়টা। প্রসূতির চিৎকারে হইচই পড়ে গেছে পুরো ক্লিনিক জুড়ে। তখন হাজারো অনুরোধের পরও মন গলেনি ডক্তার রাবেয়া বসরির। তখন চিকিৎসার অভাবে স্ত্রী এবং আগত সন্তানের মৃতু্যর হাতছানিকে উপেক্ষা করে রাত ২টা নাগাদ ক্লিনিক ছেড়ে সংলগ্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে যাওয়ার সময় হাসপাতাল গেটের সামনেই জন্ম হয় ওই নবজাতকের। প্রসূতি এবং সদ্য পৃথিবীতে আসা শিশুকন্যা উভয়ই সুস্থ আছে বলে জানায় পরিবার।

ডাক্তার রাবেয়া বসরি জানান, 'আমি ওই প্রসূতিকে দেখে নরমালে ডেলিভারি হবে বলে তার স্বজনদের অপেক্ষা করতে বলি এবং রাত সাড়ে ১১টায় বাসায় আসি। তারপর কি হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। তবে আমাকে দোষারোপ করাটা অন্যায় হবে।'

আকলিমা সেবাক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে