পটুয়াখালীতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টাকায় নদী ভরাট!

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

আব্দুস সালাম আরিফ, পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতে কাশিপুর নদীর ভরাট করা অংশ -যাযাদি
কোনো ধরনের নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থে বালি দিয়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলা এবং বাউফল উপজেলার মধ্যকার কাশিপুর নদী (মতান্তরে করাতখালী খাল) ভরাট করার ঘটনা ঘটেছে। এতে করে প্রবাহমান নদীর একটি অংশ দখলের নতুন প্রবণতা শুরু হলো। আর এর দায় এড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নদীর জমিকে সিকিস্তি জমি হিসেবে দাবি করছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ভিন্ন কথা। বাউফল উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের 'কাবিটা' প্রকল্পের আওতায় কাশিপুর খেয়াঘাট সংলগ্ন মাছ বাজারের টেকসই উন্নয়ন করার নামে ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। তবে বাজারের টেকসই উন্নয়নের নামে বালি দিয়ে নদীর মধ্যে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং করে বালি ভরাট করা হয়েছে। আর নথিপত্রে নদী ভরাটের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে কি কি কাজ করা হবে, কিংবা কীভাবে এই অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় হলো, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস। এ ছাড়া এই একই ইউনিয়নে কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। স্থানীয়রা জানান, পটুয়াখালী থেকে লোহালিয়া হয়ে বাউফল উপজেলায় যাতায়াতের বিকল্প পথ সৃষ্টি এবং পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ৯০ এর দশকে কাশিপুর নামক স্থানে পটুয়াখালীর লোহালিয়া-গলাচিপার শাখা নদী কাশিপুর নামক স্থানে বাঁধ দিয়ে স্স্নুইচ গেট তৈরি করা হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি করাতখালী খাল হিসেবেও পরিচিত। তবে বাঁধের দুই পাশে নদীর অস্তিত্ব এবং পানিপ্রবাহ থাকলেও নদীর দক্ষিণ পাশে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সৃষ্টি হওয়ার পাশপাশি পলি পরে নদীর দক্ষিণপাড় ভরাট হয়েছে। তবে কিছু কিছু স্থানে নদীপাড়ের মানুষরা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিল। আর সম্প্রতিক সময় কাশিপুর বাঁধের দক্ষিণ পাশে নদীর মধ্যে বিশাল একটি এলাকা বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। বালি ভরাট কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সাবেক সংসদ সদস্য বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজ। তবে এ বিষয়ে জানতে সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম বলেন, 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাবিটা প্রকল্পের আওতায় 'কাশিপুর খেয়াঘাট মাছ বাজারের টেকসই উন্নয়ন' নামে একটি প্রকল্প থেকে কাজটি করা হয়েছে। জায়গাটি যদি নদীর জমি হয়ে থাকে, তবে অন্য কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। এরপরও এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নদীর জমিতে বালি ভরাট করা হলে অবশ্যই তা অপসারণ করতে হবে। তবে নথিপত্রে যেটা দেখছি, জায়গাটি সিকিস্তি হিসেবে খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে।' এদিকে স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯০-এর দশকে কাশিপুর নামক স্থানে বাঁধ দিলেও ২০১৪ সালেও এই স্থানটি প্রবাহমান নদীর একটি অংশ ছিল। আর ভরাট করার আগ পর্যন্ত জায়গাটিতে জোয়ারের সময় পানিপ্রবাহ করত। বর্তমানে যে অংশটুকু ভরাট করা হয়েছে, তা পুরোটাই নদীর জায়গা।