শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

কুলাউড়ায় রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ বিক্রির অভিযোগ

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
কুলাউড়ায় রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ বিক্রির অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ দীর্ঘদিন থেকে চুরি করে বিক্রি করছে একটি চক্র। স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তার যোগসাজশে সরকারদলীয় লোক পরিচয় দিয়ে গাছ চুরি করত ওই চক্রটি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় উপকারভোগীরা এবং রাজস্ববঞ্চিত হয়েছে সরকার। কিন্তু এতদিন মামলা-হামলার ভয়ে মুখ খোলেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা।

জানা যায়, ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন ২০১৪ সালে বিট অফিসার হিসেবে কুলাউড়ায় যোগদান করেন। পরে ২০১৯ সালে কুলাউড়া থেকে বদলি হন। এরপর ২০২০ সালে পদোন্নতি পেয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে কুলাউড়ায় আবারও যোগদান করেন। যোগদানের পরই তিনি প্রভাব খাঁটিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গাছচোর চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে পুরো রিজার্ভ ফরেস্ট উজাড় করে ফেলেন। বনবিভাগের মামলার ভয়ে মুখ খুলতেন না স্থানীয় লোকজন।

কুলাউড়া মনছড়া বিটের সেগুন, গর্জন, চাপাতিসহ বিভিন্ন জাতের মূল্যবান কয়েক কোটি টাকার গাছ রাতের আধারে কাভার্ড ভ্যানে করে একটি চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করা হয়েছে। অপরদিকে কুলাউড়ার ২৭টি অবৈধ করাত কল থেকে মাসোহারা হিসেবে কয়েক লাখ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হতো। এসব বিষয়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করলে তাদেরও মামলার হুমকি দিতেন রেঞ্জার।

সরেজমিন দেখা যায়, গত মে-জুন মাস থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ আহমদের নির্দেশে উপজেলার বরমচাল বিট অফিসের অদূরে রিজার্ভ ফরেস্টের প্রায় ২ হাজার আকাশমণি গাছ কাটা হয়েছে, যা এখনো চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বিক্রিকৃত গাছের মূল্য প্রায় কোটি টাকা হবে।

বনপ্রহরী রতীন্দ্র নারায়ণ জানান, 'রেঞ্জ কর্মকর্তার নির্দেশে তারা এই গাছগুলো গাড়িতে লোড করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে রেঞ্জার নিজের অপরাধ আড়াল করতে গিয়ে স্থানীয় ইসলাছড়া পুঞ্জির নিরীহ আদিবাসী খাসিয়াদের আসামি করে দুটি মামলা করেন। মামলার ভয়ে অনেক খাসিয়া এখনো পলাতক রয়েছেন।

এ বিষয়ে কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার বলেন, এটা মূলত খাসিয়া অধু্যষিত এলাকা। তার অফিস থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বরমচাল বিট অফিস। সেখানে আলাদা বিট অফিসার রয়েছেন। কিছু গাছ কাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেগুলো সেখানের দায়িত্বরতরা তাদের কাছে রেখেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু জানেন না।

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হুমায়ূন কবির জানান, রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ কাটার কিছু তথ্য পেয়ে সরেজমিন গিয়ে স্থানীয় লোকজনসহ কয়েকজনকে নিয়ে গাছকাটা রোধে একটি কমিটি গঠন করেছেন। এরপরও যদি এভাবে রিজার্ভ ফরেস্টের গাছ বনবিভাগের লোকজন বা অন্যরা লুকিয়ে কেটে বিক্রি করে, তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে