শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম!
প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার স্বনামধন্য শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ১৩শ'। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে এসেছিল মাত্র তিনশ' জন শিক্ষার্থী। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে আতঙ্ক এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।
উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। আবার কোথাও নামেমাত্র উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে দিন যতই পার হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ততই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল কান্তি দাশ বলেন, শিক্ষকরা ঠিকই উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থী এসেছে কম। যে সব শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে তাদের নিয়েই শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়াও অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে।
উপজেলার বড়দুয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মালেক জানান, বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রথমের দিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একটু কম থাকলেও এখন বেড়েছে। আশা করছেন আগামী রোববার থেকে শিক্ষার্থীরা পুরোদমে বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করবে।
এদিকে উপজেলার কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। বেশিরভাগ কলেজে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী এসেছেন। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা উপস্থিত হয়েছেন। যেসব শিক্ষার্থী এসেছেন তাদের নিয়েই চলছে শ্রেণি কার্যক্রম।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার কম। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির ফলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক আদেশে সব প্রতিষ্ঠান গত মঙ্গলবার থেকে খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ মোতাবেক সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। অনেক অভিভাবক ভয় ও আতঙ্কের কারণে তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। রোববার লংগদু উপজেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির সংখ্যা একেবারে কম। কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ভয় ও আতঙ্কের কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসছে না। তাই উপস্থিতি কম।
লংগদুর উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, প্রাথমিক ও কিছু মাদ্রাসা প্রধানরা জানান, 'আমরা নির্দেশনা পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠান খুলেছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। অভিভাবকরা ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় পাঠাচ্ছেন না। তবে আশা করা হচ্ছে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পাবে।'
এদিকে, উপজেলার একমাত্র সরকারি স্কুল লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রশিদুল ইসলাম জানান, 'আমাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছি। তবে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কম। আশা করছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে।'
প্রসঙ্গগত, লংগদু উপজেলায় একটি সরকারি ডিগ্রি কলেজ, একটি ডিগ্রি ফাজিল মাদ্রাসা, একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল এন্ড কলেজসহ বেসরকারি কলেজ তিনটি, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি দাখিল মাদ্রাসা, ছয়টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুইটি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।