পস্নাস্টিক বর্জ্য ও বোতল
নীলফামারীতে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান
প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী
নীলফামারীতে পুরনো পস্নাস্টিক কাটিং করে নিজের ভাগ্যবদলের পাশাপাশি তৈরি করেছেন অন্যের কর্মসংস্থান। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ২০ হাজার লোকের। এদিকে যত্রতত্র পড়ে থাকা পস্নাস্টিক ও পস্নাস্টিকের পণ্য সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করায় পরিবেশ দূষণ কমছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারী জেলায় তিন শতাধিক ছোট-বড় পস্নাস্টিকের কুচি তৈরির কারখানা রয়েছে। প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন কাজ করেন ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক। আর এসব কারখানায় পস্নাস্টিকের পুরনো বোতল, স্যালাইনের ফেলে দেওয়া পস্নাস্টিকের কভার, সিরিঞ্জসহ বিভিন্ন পস্নাস্টিকের পণ্য মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হয় কুচি। এসব কুচি এখান থেকে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন বড় বড় পস্নাস্টিকের কারখানায়। বিদেশেও রপ্তানি করে আয় করছে বৈদেশিক মুদ্রা। এ ছাড়া এসব কুচি তৈরির কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খাতের আরও বিকাশ সম্ভব বলে জানান কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, একদিকে ফেলে দেওয়া পস্নাস্টিকের বোতল, ভাঙা পস্নাস্টিক বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে পস্নাস্টিক কুচি শুকাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। আবার কেউ কেউ সেই স্তূপ থেকে একদিকে বোতল, কোথাও স্যালাইনের ব্যাগ, কোথাও সিরিজ, কোথাও বোতলের ছিপি, আরসির বোতল কালার আলাদা করে ভাগ ভাগ করে রাখছেন। আর এসব পস্নাস্টিকের দ্রবাদি ভাগ ভাগ করে মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হবে কুচি।
সদর ইটাখোলা বাদিয়ার মোড় কারখানায় কাজ করার সময় কথা হয় নারী শ্রমিক কেয়া রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, 'সকাল থেকে সারাদিন পস্নাস্টিকের দ্রব্য বাছাই করে ভাগ করে রাখি। আর এখান থেকে নিয়ে গিয়ে মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় কুচি। সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই ২৫০ টাকা। তবে আগে বাড়িতে সংসারের কাজ করতাম আর বসেই থাকতাম। সংসারে অনেক অভাব ছিল। বর্তমানে সংসারে অভাব নেই বললেই চলে।' কবিতা রানী নামে আরেক নারী শ্রমিক বলেন, 'আগে সংসারে অভাব ছিল। বর্তমানে এখানে কাজ করে যা পাই তা দিয়েই আমার সংসার ভালোই চলছে।'
কারখানার মেশিন চালক বিকাশ চন্দ্র রায় বলেন, শ্রমিকরা পস্নাস্টিকের পণ্যগুলো ভাগ করে রাখেন, সেসব দ্রব্য নিয়ে এসে মেশিনে দিয়ে কুচি তৈরি করা হয়। এরপর এসব কুচি ওয়াশ মেশিনে পরিষ্কারের পর রোদে শুকানো হয়। পরে বস্তায় ভরে প্যাকেট জাত করা হয় বিক্রির জন্য।
কুলছুম বেগম বলেন, 'স্বামী মারা যাওয়ায় অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতাম। তিন সন্তানকে নিয়ে এক বেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে কোনো রকমে দিন কাটত। কিন্তু এখন পস্নাস্টিক বর্জ্য কারখানায় কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছি।'
কারখানার মালিক কমল রায় বলেন, বিভিন্ন ভাঙারির দোকান ও হকারদের কাছ থেকে পরিত্যক্ত পস্নাস্টিকের পণ্য কাঁচামাল হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। কুচিগুলো আমরা মিলারদের কাছে বিক্রি করে থাকি। কুচির আবার বিভিন্ন নাম রয়েছে। আর এই বোতলের কুচি যায় বিদেশে। দেশেও বিক্রি হয়ে থাকে।
ইলিয়াস হোসেন নামের আরেক পস্নাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী বলেন, পথে-ঘাটে এবং নালা-নর্দমায় পড়ে থাকা পস্নাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে এনে এগুলো পরিষ্কার করে আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় পস্নাস্টিকের গুটি। এরপর নতুন করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় নানা পণ্য। এখানে দুই-তিন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে।
পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবেশের উপকার করছে দাবি করে তিনি বলেন, কোটি কোটি বোতলসহ পস্নাস্টিক বর্জ্য যদি খাল, নদী দখল করত, তা হলে তা পলিথিনের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠত। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আতিক আহমেদ বলেন, বর্তমান পস্নাস্টিক বেশি ব্যবহারের কারণে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। পস্নাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবে দিন দিন ফসল কমে যাচ্ছে। পরিত্যক্ত পস্নাস্টিক দিয়ে কুচি তৈরি হওয়ার কারণে পরিবেশ রক্ষা পাবে। পস্নাস্টিকের কুচি পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মন বলেন, ফেলে দেওয়া পস্নাস্টিক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পরিবেশ তার দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। পাশাপাশি এসব কারখানায় কাজ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।