তাহিরপুরে বালুখেকোদের প্রতিহত করতে রাত জেগে নদীর তীর পাহারা
প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে রাত জেগে নদী তীর পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। গত শনিবার রাতে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের জাদুকাটা নদীর পশ্চিম তীর ঘাগটিয়, চকবাজার, বড়টেক এলাকায় শত শত লোক বালুখেকোদের প্রতিহত করতে রাত জেগে নদী তীর রক্ষায় শক্ত অবস্থান নেন। তার আগে নদী রক্ষায় ঘাগটিয়া গ্রামের একদল তরুণের উদ্যোগে এক গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঘাগটিয়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী আরও দু'একটি গ্রামের ৫ শতাধিক লোকজন স্বাক্ষর করেন।
এলাকাবাসী জানান, ভারত সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি নদী জাদুকাটা একসময় ছোট একটি নদী ছিল। পাহাড়ি ঢলে প্রতি বছর নদী দিয়ে বালু পাথর নেমে আসে। বহু বছর ধরে এ নদী থেকে স্থানীয় লোকজন গ্রামীণ প্রযুক্তি বেলচা, কোদাল দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত মোটামুটি এ প্রযুক্তিতে বালু পাথর উত্তোলন হতো জাদুকাটা নদীতে। এরপর বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন শুরু হয়। যা অব্যাহত রয়েছে দীর্ঘ ২৪ বছর। এরই মধ্যে বছর দশেক থেকে নদীর মধ্যে দেখা দেয় বালু পাথর সংকট। তখন থেকে শুরু হয় নদীর তীর কাটা। কখনো স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে, কখনো রাতের অন্ধাকারে তীর কাটা অব্যাহত থাকে বছরের পর বছর। যে কারণে জাদুকাটা নদীর দুই তীরের দূরত্ব বাড়ে বছরে বছরে। লোকমুখে কথিত ২শ' মিটারের প্রশস্ত জাদুকাটা নদী এখন ১ কিলোমিটারের বেশি প্রশস্ত হয়েছে শুধুমাত্র দুই তীর কেটে বালু নিয়ে যাওয়ার কারণে।
সম্প্রতি বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর দেশে প্রশাসনিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা দেখা দিলে জাদুকাটার বালুখেকোরা চরম মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ইচ্ছে মতো জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু নিয়ে যায়। এ অবস্থায় জাদুকাটা নদীর তীর ঠেকাতে এবং নদী রক্ষায় ঘাগটিয়া গ্রামের একদল তরুণ উদ্যোগ নেয় গণস্বাক্ষর কর্মসূচির। এতে গ্রামের অনেকেই সাড়া দেয় এবং শনিবার রাত থেকেই নদীর তীর রক্ষায় গ্রামবাসী পাহারা বসায়।
গ্রামের তরুণদের একজন তানবীর হাসান অমিয়। তিনি বলেন, প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে বালুখেকো চক্ররা জাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু নিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তাদের কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছিল না। আমরা গ্রামবাসী শনিবার রাত থেকে নদী তীরে পাহারা বসিয়েছি। বালুখেকো চক্রদের যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, জাদুকাটা নদীর তীর রক্ষা করা খুব জরুরি। না হলে অচিরেই নদী তীরবর্তী, ঘাঘটিয়া, বড়টেক, চকবাজারসহ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।