সেনাবাহিনীর সহায়তায় স্বাভাবিক হচ্ছে পুলিশের কার্যক্রম

স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কাজে ফেরেন বকশীগঞ্জ থানা ও দেওয়ানগঞ্জ থানা পুলিশের সদস্যরা -যাযাদি
সেনাবাহিনীর সহায়তায় কাজে ফিরছে পুলিশ বাহিনী। কোটা আন্দোলন ঘিরে পুলিশের সদস্যদের ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় সারাদেশে অধস্তন পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতিতে যান। এর ফলে সারাদেশে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তা নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে নানা ধরনের শঙ্কা দেখা দেয়। টানা চারদিন কর্মবিরতির কারণে পুলিশবিহীন দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এরমধ্যে পুলিশের নিরাপত্তার বিষয়টি সবার সামনে চলে আসে। তাই নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্মবিরতিতে যায় সারাদেশের পুলিশ। কিন্তু পুলিশের প্রয়োজনীতার কথা চিন্তা করে জনগণের স্বার্থে পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরাতে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা, পুলিশি সেবা জোরদার করার লক্ষ্যে পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য পুলিশি কার্যক্রম চালু করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়। এদিকে পুলিশ বাহিনী কাজে ফেরায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, গত শুক্রবার বিকাল থেকে সেনাবাহিনীর বকশীগঞ্জ ক্যাম্পের সহযোগিতায় পুলিশিং কাজে ফেরেন বকশীগঞ্জ থানা ও দেওয়ানগঞ্জ থানা পুলিশের সদস্যরা। সেনাবাহিনী তাদের সহযোগিতা ও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে মাঠে কাজ করছেন সেনা সদস্যরা। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশি কার্যক্রম চালু হওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে মানুষের মধ্যে। এখন থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী শিক্ষার্থী ও স্কাউট সদস্যদের নিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। স্থানীয়রা জানান, পুলিশ কর্মবিরতিতে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বেড়ে গিয়েছিল। সব শ্রেণির মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ছিল। অনেক মানুষকে রাত জেগে জানমালের নিরাপত্তা দিতে হয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী মাঠে নেমে পুলিশের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে পুলিশের পাশে দাঁড়ানোয় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। সেনাবাহিনীর বকশীগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সারোয়ার মোর্শেদ জানান, 'পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। জনগণের কথা চিন্তা করে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি ছেড়ে আবার কাজে নেমেছেন। তাই আমরা সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই।' চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারের চকরিয়া থানার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় শনিবার সীমিতআকারে থানার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর জিওসি ১০ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, কক্সবাজার মেজর জেনারেল শেখ সরওয়ার হোসেন, কমান্ডার ২ পদাতিক ব্রিগেড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নুরন্নবী, অধিনায়ক ২৯ এসটি ব্যাটালিয়ন লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া খন্দকার, লে. কর্নেল কামরুজ্জামান, অধিনায়ক ১ ইস্ট বেঙ্গল, কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, ইউএনও ফখরুল ইসলাম প্রমুখ। নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নন্দীগ্রাম থানা পুলিশের সব কার্যক্রম। জনমনে আতঙ্ক কাটিয়ে অবশেষে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। পুলিশ জানায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় তারা থানার সব কার্যক্রম শুরু করেছে। জনসাধারণ তাদের সমস্যা নিয়ে থানায় আসছে। তারাও সেগুলো দেখছে এবং তাদের একদল টিম সবসময় মাঠে টহল দিচ্ছে। রয়েছে ১ পস্নাটুন সেনাবাহিনীর সদস্য, আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি রক্ষায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে তারা। অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ও মন্দিরে কোথাও কেউ যেন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে মাঠে রয়েছে বিএনপিসহ জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম থানার ওসি আজমগীর হোসেন আজম জানান, 'আমরা সেনা সদস্যদের সহায়তায় থানার কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের একদল মাঠে টহল দিচ্ছে। নন্দীগ্রামের কোথাও যেন কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা না বাধে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।' পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, শনিবার থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টহল চলছে জেলাজুড়ে। এতে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সেনাবাহিনীর ২৮ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট দিন-রাত নিরাপত্তা টহল পরিচালনা করে নরসিংদীতে কর্মরত সব পুলিশ স্টেশন, মন্দির ও হিন্দু অধু্যষিত এলাকা, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সেই সঙ্গে জনমনে গণসচেতনতা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমে এসব তথ্য জানান ক্যাপটেন রকিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই ইউনিটের সেনাসদস্য শুক্রবার থেকে নরসিংদী জেলার সাতটি থানায় অবস্থান করে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন এবং পুলিশের প্রতি জনগণের সহযোগিতার মনোভাব ও উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের অকৃত্রিম সাহস মনোবল জুগিয়ে কাজ শুরু করার জন্য অনুপ্রেরণা দেন। সদরপুর, (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ জারি হলে সদরপুর থানায় ফিরেছে পুলিশ সদস্যরা। তবে তারা সাদা পোশাকে রয়েছেন। থানার নিরাপত্তায় পুলিশের সঙ্গে রয়েছেন আনসার সদস্যরা। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল টিম অব্যাহত রয়েছে। সদরপুর থানায় ভাঙচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগের কারণে পুলিশ সক্রিয় কার্যক্রম করতে পারছে না। এ কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্থানীয় থানা পুলিশেকে। পুলিশের সক্রিয় কার্যক্রম না থাকায় এখন উপজেলার নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও জনমনে আতঙ্ক রয়েছে। স্থানীয়রা নিজ নিজ উদ্যোগে পাড়া-মহলস্না, হাট-বাজারে রাত জেগে দল বেঁধে পাহারা দিচ্ছেন। সদরপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় পুলিশ থানায় ফিরেছে। ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় বর্তমান কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে বেশ সময় লাগবে। থানার সব উপকরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হতে সময় লাগবে। থানার কতগুলো অস্ত্র বা কতগুলো মোটর সাইকেল ছিল, তা হিসাব না করে এই মূহুর্তে বলা সম্ভব না। উলস্নাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের উলস্নাপাড়ায় পুরো স্টাফ নিয়ে পুনরায় কর্মস্থলে যোগদান করেছেন উলস্নাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম। শনিবার বেলা ১টার দিকে সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইন থেকের্ যাব-১২ এর কমান্ডার মারুফ হাসানের নেতৃত্বে উলস্নাপাড়া মডেল থানা পুলিশ কর্মস্থলে যোগদান করে। উলস্নাপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মডেল থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলামকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজাদ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক হেলান সরকার, জাহিদুল ইসলাম মিষ্টার, জামায়াত নেতা আব্দুস ছামাদ, শাহজাহানসহ অনেকে।