পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলায় কাজ করছে 'পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প'। ক্রিক সংস্কার ও মেরামত, ক্রিক উন্নয়নের জন্য বাঁধ ও ড্রেন নির্মাণ, মাছের প্রদর্শনী খামার স্থাপন, সুফলভোগীদের মাছচাষ-বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন ও দরিদ্র মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে মৎস্য খাতে উন্নতি সাধনই এই প্রকল্পের মূল কাজ।
উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত মানিকছড়ি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে এই প্রকল্পের আওতায় ৮টি ক্রিক উন্নয়ন, দুটি ক্রিক সংস্কার, ৪টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়। যার সুফলভোগীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এ ছাড়াও ১৪০ জন সুফলভোগীদের দক্ষতা উন্নয়নে মৎস্য চাষ-বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানসহ স্টক হোল্ডার ক্যাম্পেইন-বিষয়ক কর্মশালা ও ৩৫ জন মৎস্যচাষির মধ্যে উপকরণ বিতরণ করা হয়।
সম্প্রতি উপজেলার দোছড়িপাড়া, গভামারার মোষখালী, গোদাতলী, মলঙ্গীপাড়া, গচ্ছাবিল, এয়াতলংপাড়া, মধ্য একসত্যাপাড়া ও রাইঙ্গাপাড়া এলাকার ক্রিক ও প্রদর্শনী খামার ঘুরে দেখা যায়, মাছ ও ক্রিকের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। মাছের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এই প্রকল্পে ভাগ্য ফিরছে প্রান্তিক মৎস্যচাষিদের। পূরণ হচ্ছে আমিষের চাহিদা। স্থানীয়ভাবে সৃষ্টি হচ্ছে কর্মস্থান। মাছের রেণু বা পোনা উৎপাদন করতেও দেখা গেছে অনেক প্রদর্শনীতে।
উপজেলার দোছড়িপাড়া ক্রিকের সুফলভোগী দয়া ভূষণ চাকমা বলেন, 'উপজেলা মৎস্য অফিসের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে পরিত্যক্ত এক একর জমিতে বাঁধ দিয়ে ক্রিকে মৎস্য চাষ শুরু করি। এ পর্যন্ত ক্রিক থেকে আড়াই লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি।'
গোদাতলী ক্রিকের সুফলভোগী রমজান আলী বলেন, 'আমরা সাতজন এই ক্রিকের অংশীদার। রুই জাতীয় মাছ চাষ করে বছরে প্রায় ৬০০-৭০০ কেজি মাছ উৎপাদন করছি, যা বিক্রি করে আমরা বেশ লাভবান হচ্ছি।' আরেক সুফলভোগী মাসুদ পারভেজ মমিন জানান, নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পোনা উৎপাদন করে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হয় তার ক্রিক থেকে। সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানও।
সুফলভোগীরা জানান, এসব ক্রিকের পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করারও সুবিধা পাওয়া যায়।
মানিকছড়ি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার সরকার জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকে মৎস্যচাষিদের প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ ও সহযোগিতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে মৎস্য দপ্তর। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্য চাষের ফলে প্রাণিজ আমিষ তথা পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ক্রিকের বাঁধের ওপর সবজি উৎপাদন হচ্ছে। ক্রিক-সংশ্লিষ্ট পাহাড়ে ফলজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রিক-সংশ্লিষ্ট পাহাড়ে হাঁস ও মুরগি পালন সম্ভব হচ্ছে। ক্রিকের পানি ব্যবহার করে ক্রিকের আশপাশের অনাবাদী জমিগুলোতে ধান ও সবজি চাষ হচ্ছে। ক্রিকের পানি গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।