খাগড়াছড়ির রামগড়ে ফাহিম (১১) নামের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থীকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে মাইনউদ্দিন (১৬) নামের নবম শ্রেণির এক কিশোর। ফাহিম ওই গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ও নতুনবাজার মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এবং মাইন একই গ্রামের মুমিনউলস্নাহর ছেলে ও একই মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র।
অসম্মান করার প্রতিশোধ নিতে ফাহিমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে মাইন। গ্রামবাসী মাইন উদ্দিন ও ৩ সহযোগীকে আটক করে রেখেছে। আটক সহযোগীরা হলো- একই গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে আসাদ উলস্ন্যাহ গালিব (১০), শফিকুল ইসলামের ছেলে আজাদ হোসেন উচাইদ (১৫) ও মীর হোসেনের ছেলে আল ফাহাদ (১৪)। এরা সবাই আত্মীয় ও প্রতিবেশী। গত সোমবার এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। বুধবার রাতে হত্যায় জড়িত ৪ শিশু-কিশোরকে আটকের পর ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়।
হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মাইনউদ্দিন খুনের কথা স্বীকার করে বলে, ১৬-১৭ দিন আগে ফাহিমের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। তার সঙ্গে ফাহিম বেয়াদবি করে। 'অসম্মান' করার প্রতিশোধ নিতেই সে তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। সহযোগী গালিব জানায়, ঘটনার দিন মাইনউদ্দিন ও গালিব পুকুরের পাশে একটি মাচায় বসেছিল। ফাহিম পুকুরে গোসল করতে গেলে তারাও যায়। এক পর্যায়ে ফাহিমকে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখে মাইনুদ্দিন। গালিবকে লোকজন আছে কিনা তা দেখতে পুকুর পাড়ে পাহারায় বসায়। ফাহিম অচেতন হয়ে গেলে মাইনউদ্দীন ও গালিব পাড়ে উঠিয়ে আনে। পারে উঠানোর পর ফাহিম নিঃশ্বাস নিলে পুনরায় তাকে পাশের নির্জন টিলায় নিয়ে গলায় জঙ্গলী লতা পেচিয়ে মৃতু্য নিশ্চিত করে জঙ্গলে ফেলে আসে।
সহযোগী আজাদ বলে, 'ফাহিমকে হত্যার পর ফোনে মাইনউদ্দিন আমাকে জানায় এবং সেখানে যেতে বলে। একথা কাউকে বলতে নিষেধ করে। বললে আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয় মাইনউদ্দিন।
নিহত ফাহিমের পিতা সাইফুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুরে ছেলে বাড়িতে না আসায় খোঁজাখুজি করি। সন্ধ্যার দিকে ফাহিমের মা ও আমার স্বজনরা আশপাশ এলাকায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পুকুড়পাড়ের টিলার মাঝামাঝি স্থানে নির্জন জঙ্গলে তার মরদেহ পায়। পরে ওই পুকুর পাড়ে ফাহিমের জুতা ও গেঞ্জি খুঁজতে গেলে মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় আগুনে পোড়া গেঞ্জি ও জুতা পাওয়া যায়। এতে ফাহিমের মৃতু্য নিয়ে সন্দেহ হয়। গ্রামবাসীকে নিয়ে ফাহিমের খেলার সঙ্গী গালিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যার ঘটনা বলে দেয়। পরে গ্রামবাসী মাইনউদ্দিনসহ চারজনকেই আটক করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হানিফ বলেন, 'আমরা এদের আটক করে তাৎক্ষণিকভাবে রামগড় থানা পুলিশসহ সেনাবাহিনীকে খবর দিয়েছি। তবে কেউ এখনও আসেনি। গ্রামবাসীর পাহারায় চারজনকে আটকে রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এলে সোপর্দ করা হবে।
রামগড় থানার ওসি দেবপ্রিয় দাশ বলেন, ঘটনাটি গ্রামবাসী তাকে জানিয়েছে। চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।