নীলফামারী জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রতিদিন দিনব্যাপী তীব্র যানজট ও জটলা লেগেই থাকে। এ অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি পালন করায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেই যানজট সামলে নিয়ে পুরো জেলা শহরটিতে শৃঙ্খলায় নিয়ে এসেছে। শুধু শৃঙ্খলা নয়, পাশাপাশি শহর পরিষ্কারসহ সড়ক সংস্কারের কাজও করছে তারা।
শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, নীলফামারী শহরের চৌরঙ্গীর মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারুক আহমেদ, নীলফামারী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হাবিবুলস্নাহ বেলালী ও মোস্তফা কামাল, সংগলশী হাজীপাড়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সিয়াম হোসেন, আনছার সদস্য রাজ কুমার।
টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারুক আহমেদ জানায়, শহরের বড় বাজার, গাছবাড়ী, আনন্দবাবুর পুল, উকিলের মোড়, পলাশবাড়ী বাইপাশ সড়ক মোড় ও মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ মোড় ও বাস টার্মিনাল পয়েন্টে প্রতিদিন পর্যায় ক্রমে যানজট নিরসনে কাজ করছে। চৌরঙ্গীর মোড়ে বিএনসিসির সদস্য মোস্তফা কামালকে ইট শুড়কি দিয়ে গর্তযুক্ত সড়ক সংস্কার করতে দেখা যায়।
নীলফামারী শহরের শাহীপাড়ার বাসিন্দা রংপুর কারমাইকেল কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া বসরী মীম জানান, ছাত্ররা কেবল আন্দোলনই করে না, জনগণের সেবা করতে নিবেদিত প্রাণ। দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তেও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারে। ছাত্ররাই আগামী দিনে দেশের হাল ধরবে। বিনির্মাণ করবে দেশের অর্থনীতি।
নীলফামারী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আল মাসুদ চৌধুরী জানান, শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকান্ডে আমরা গর্বিত।
এদিকে সৈয়দপুর থানা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন আনসার সদস্যরা। নতুন অভিজ্ঞতা তবুও ফুরফুরে মেজাজে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তারাও অবদান রাখছেন। বসে নেই শিক্ষার্থীরাও। তারা পুরো শহরটা পরিষ্কারে নেমেছে। এতদিন আন্দোলনের কারণে সড়কে পড়ে থাকা ইটপাটকেল, বিভিন্ন লেখা থাকা দেওয়াল, পোড়া গাড়ি সরিয়ে মানুষের চলাচলের পথ করে দিয়েছে।
শহরের পাঁচ মাথা মোড়, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক, মদিনা মোড় নানা স্থানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে শিক্ষর্থীরা। মুখে বাঁশি ও সহপাঠীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করছে নিষ্ঠার সঙ্গে। পথচারী আকবর হোসেন বলেন, ছেলেপুলেরা না থাকলে শহরে চলাচল দুষ্কর ছিল। এ কাজে স্কাউট ছেলে-মেয়েদেরও দেখা গেছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সৈয়দপুরের ট্র্যাফিক পুলিশ না থাকায় এমন বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। যার ফলে ২ মিনিটের রাস্তা পার হতে লাগছে ১৫ মিনিট। শিক্ষার্থীরা রাস্তা পরিষ্কার না করলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতো। দেশ সুশৃঙ্খল করার দায়িত্ব কেবল ছাত্রসমাজের না বরং আমাদের সবার। তাই সবাই নিজ দায়িত্বে নিজের দেশ রক্ষা করুন।
সৈয়দপুর ইউনাইটেড ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সুভা) সভাপতি হাফিজ উদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীরা যানজট নিরসনে যে কাজ করছে তা প্রশংসনীয়। প্রয়োজনে আমার সংগঠনের সদস্যদের মাঠে নামানো হবে। অন্যান্য উপজেলা শহরেও একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে।