বিপণিবিতান খোলা হলেও ভিড় কম থানা ও সড়ক পুলিশবিহীন
পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি চট্টগ্রাম মহানগর
প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী বিভিন্ন সহিংস ঘটনার মধ্যে এখানো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি চট্টগ্রাম মহানগরের জনজীবন। মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান খোলা হলেও ভিড় ছিল কম। অফিস-আদালত খুললেও তেমন কর্মচাঞ্চল্য ছিল না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল না শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি। সড়কে গণপরিবহণ ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। ফলে ভোগান্তি সঙ্গে করে গন্তব্যে ছুটতে হয়েছে নগরবাসীকে। তবে পুরো নগর ছিল পুলিশবিহীন। সড়কের মোড়ে ছিল না চিরচেনা ট্রাফিক পুলিশ, পুলিশের টহল গাড়ি। থানাগুলোও ছিল পুলিশ-শূন্য। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন থানা-উপজেলায় এখনো হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক রয়েছে জনসাধারণের মধ্যে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ, ইপিজেড, হালিশহর, একেখান, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, চকবাজার ও জিইস মোড়ে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। গণপরিবহণ কম থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে যাত্রা করেন অনেকে। এসব এলাকায় অধিকাংশ দোকানপাট খোলা ছিল। তবে ভিড় ছিল না অন্যান্য দিনের মতো। গণপরিবহণের পাশাপাশি বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোটেম্পো, প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায়। তবে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের কাউকে দেখা যায়নি। নগরের বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত সবকটি মোড়ে ট্রাফিক বক্সগুলো ধ্বংসস্তূপের মতো পড়ে রয়েছে।
নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় সড়কে যান চলাচলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মোড়গুলোতে সৃষ্টি হয় যানজট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ট্রাফিকের কাজ করেন। তাদের প্রচেষ্টায় যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক ছিল।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, 'আমরা এখন নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টা করছি। কোনো দায়িত্ব পালন করছি না। পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ পেলেই পুলিশের স্থাপনায় ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। মঙ্গলবার সকালেও সিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।'
এদিকে, চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানা ও উপজেলায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অনেকে ব্যক্তিগত ইসু্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হামলার ঘটনায় স্থানীয়রা জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর অনেকে ব্যক্তিগত ইসু্যকে কেন্দ্র করে বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। এভাবে নৈরাজ্য, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা চলতে থাকলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে যে একনায়কতন্ত্রের অবসান হয়েছে, তা ম্স্নান হয়ে যাবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার গণআন্দোলনে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বিকাল ৩টা থেকে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন জায়গায় বিজয় ও আনন্দ মিছিল বের করেন জনতা। মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙচুর ও হামলা করেছেন চট্টগ্রাম নগরের ১১টি থানায়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় হামলা করে ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কোতোয়ালি মোড়ের অদূরে পাথরঘাটায় রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাসায়ও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ছাড়া মেয়র গলিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায়ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় আন্দরকিলস্নায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বাসায়ও।