টেবিল, চেয়ার, আসবাবপত্র কিছু নেই। খোয়া গেছে ফ্যান, কম্পিউটার। জানালার গস্নাস ভেঙে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দাপ্তরিক কাগজপত্র। বিধ্বস্ত সেই অফিসে একটি চেয়ারে বসে অপলক তাকিয়ে আছেন অফিস প্রধান। যেন কিছুই মেলাতে পারছেন না। কি থেকে কি হয়ে গেল। চেনা অফিসটি আজ বড্ড অচেনা লাগছে।
এমন দৃশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের। গত সোমবার কোটাসংস্কার আন্দোলন চলাকালে উপজেলার অন্যান্য অফিসের সঙ্গে তছনছ করা হয়েছে এই অফিসটি। অফিস প্রধান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা কাউছার সজীব ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন মেঝের দিকে। অফিসে কিছু নেই। কীভাবে আবার দাপ্তরিক কাজকর্ম করবেন সেটাই যেন ভাবাচ্ছে তাকে। শুধু তাই নয়, এলজিইডি, সমাজসেবা, সমবায় অফিস, ডিজিটাল সেন্টার, যুব উন্নয়ন অফিস, পিআইওর অফিসসহ উপজেলা প্রশাসনের ৮-১০টি অফিস তছনছ করেছে ক্ষুব্ধ জনতা। এসব অফিসের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্কেনার, ফ্যান, চেয়ার, টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং লুটে নিয়ে গেছে। পুড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডের সরকারি গাড়ি। ভাঙচুর করেছে সিসি ক্যামেরা। তবে সাব রেজিস্ট্রি অফিস, হিসাবরক্ষণ অফিস, নির্বাচন অফিসসহ কয়েকটি অফিসের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে ক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগ অফিস, একটি ইউনিয়ন পরিষদের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা অফিস ভাঙচুর ও আসবাবপত্র পুড়িয়ে দিয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের অফিসে।
ক্ষুব্ধ জনতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ও পৌর মেয়র তাকজিল খলিফার বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ভাঙচুর হয়েছে আরও কিছু নেতার বাড়িঘর। রাধানগর স্পোর্টিং ক্লাব ভাঙচুর করেছে আন্দোলনে অংশ নেওয়া লোকজন।
তবে মঙ্গলবার আখাউড়ার পরিস্থিতি শান্ত স্বাভাবিক। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সরেজমিন মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, অফিসগুলো সম্পূর্ণ ফাঁকা। ভেতরে কোনো আসবাবপত্র, ফ্যান, লাইট, কম্পিউটার নেই। মেঝেতে পড়ে আছে কিছু কাগজপত্র। সরকারি গাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাতাসে আগুনে পোড়া গন্ধ। বাড়ান্দায় পায়চারী করছেন যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মুসলেহ উদ্দিন, সমবায় কর্মকর্তা দুবরাজ রবি দাস, সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুছ চৌধুরী বলেন, 'আমাদের অফিসের আসবাবপত্র ও বই নিয়ে গেছে।'
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা কাউছার সজীব বলেন, 'আমার অফিসের সবকিছু নিয়ে গেছে। সবকিছু গোছাতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। এখন কীভাবে কাজ করবো সেটাই ভাবছি।'
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আমার অফিসের লেপটপ, ডেস্কটপ, স্কেনার, ফ্যান নিয়ে গেছে।'
জানতে চাইলে ইউএনও গাজালা পারভীন রুহী বলেন, 'উপজেলা প্রশাসনের অনেকগুলো দপ্তর লুট হয়ে গেছে। এখন এগুলো পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি।'