সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার প্রশাসনিক ভবন না থাকায় দাপ্তরিক কাজ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে চট্টগ্রামের সারিয়াকান্দিতে এসিল্যান্ড না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ভূমিসেবা। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দুর্ভোগের চিত্র-
মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার প্রশাসনিক ভবন না থাকায় দাপ্তরিক কাজ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করতে চাইলেও পাচ্ছেন না নির্ধারিত অফিসকক্ষ। অনেক দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করতে দেখা যায় না। এতে দেখা দিয়েছে ভুক্তভোগীদের সীমাহীন ভোগান্তি। উপজেলাটি ২০২১ সালের ২৬ জুলাই ১১৭তম নিকারের সভায় অনুমোদিত হওয়ার প্রায় ১ বছর পরে ২০২২ সালের ২০ জুলাই নাহিদ হাসান খানের প্রথম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে পদায়নের মাধ্যমে উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। নবগঠিত উপজেলাটির ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলেও, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি। এ অবস্থায় উপজেলা পরিষদের ভবন না থাকায়, অস্থায়ীভাবে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় চলছে ইউএনও'র দাপ্তরিক কাজ।
এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত গত ৫ জুন শেষ ধাপে মধ্যনগর উপজেলার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর বিজয়ী জনপ্রতিনিধিরা গত ২৭ জুন শপথ গ্রহণ করেন। অথচ নির্ধারিত অফিস কক্ষ না থাকায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দাপ্তরিক কাজে অফিসে বসতে পারেননি।
এসব সমস্যা নিয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক ভূইয়া, পরবর্তীতে দুইজন ইউপি চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় উপস্থিত থাকা মধ্যনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জিব রঞ্জন তালুকদার বলেন, 'নতুন উপজেলা হওয়ায় আমাদের এমন সমস্যা হচ্ছে।' নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, 'আমরা ভবন সংকটের জন্য অফিস পাচ্ছি না। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন কিন্তু জনগণের সেবা দিতে পারছি না।'
নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়া বলেন, মধ্যনগর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চেয়ারম্যানের অফিস করলে জনসমাগম হবে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হতে পারে বলে সেখানে অফিস করা যাবে না। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিস নিয়ে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার ভিত্তিতে অফিস করা হবে।'
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে কয়েক মাস ধরে উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) পদ শূন্য রয়েছে। এতে উপজেলার পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়নের জমির মালিকদের চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভূমি অফিসে সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
সেবাপ্রত্যাশীরা ভূমি অফিসে এসে জমির খাজনা, নামজারি, নামপত্তন, বন্দোবস্ত, ইজারা, খাসজমির কাগজপত্র এবং ডিসিআর পেতে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে ভূমিসেবা। এ ব্যাপারে দ্রম্নত ভূমি কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস আগে এসিল্যান্ড সবুজ কুমার বসাক বদলি হন। এর পর থেকে এ দপ্তরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুর রহমান। বদলিজনিত কারণে বর্তমানে পদটি কয়েক মাস ধরে শূন্য।
উপজেলা ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জমির দাখিলা কাটা, খাজনা আদায়, খাসজমির ডিসিআর ও নামজারি করতে হয় মাসে দেড় শতাধিকের ওপরে। দীর্ঘদিন এসিল্যান্ড না থাকায় তারা নানা দুর্ভোগে পড়েছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা জমির মালিকদের সময়মতো দাখিলা কেটে সমাধান দিতে পারছেন না। অফিসের দাপ্তরিক কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে উপজেলার পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়নের জমির মালিকরা অফিসে এসে কোনো সমাধান না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সারিয়াকান্দি ইউএনও তৌহিদুর রহমান বলেন, 'উপজেলার জন্য একজন এসিল্যান্ড খুব দরকার। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি একজন এসিল্যান্ড সারিয়াকান্দিতে আসবেন।'