বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। পতিত চাতাল, বাড়ির আঙ্গিনা, পুকুর পাড়, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় মাটি ভরে মশলা জাতীয় ফসল আদা চাষে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। স্বল্প জায়গায় কম খরচে অধিক লাভের আশায় বাণিজ্যিকভাবে এই প্রথম আদা চাষে ঝুঁকছেন এই উপজেলার চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, সাধারণত যেসব জায়গায় কোনো ফসল উৎপাদন হয় না, সেসব ছায়াযুক্ত পতিত জায়গায় নিয়মিত পরিচর্যা করলে আদার অধিক উৎপাদন হয়ে থাকে। এই উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে এই প্রথম ১৭ হাজার ৬৪০ বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। কৃষি অফিস হতে লাভজনক এই পদ্ধতিতে আদা চাষে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। পতিত জায়গায় সীমিত খরচে অল্প শ্রমে প্রথমে ২৫ ভাগ মাটি, ২৫ ভাগ বালু, ২৫ জৈব সার ও তুষ বস্তায় ভরে আদা চাষের উপযোগী করা হয়। চৈত্র হতে বৈশাখ মাস পর্যন্ত আদার বীজ রোপণ করা হয়। মাঘ ও ফাল্গুন মাসে পরিপুষ্ট আদা ঘরে তোলা যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আদা চাষে কম রোগবালাই হয়ে থাকে। প্রতি বস্তায় আদা চাষ ৭০ টাকা খরচ হয়। গাছ ভালো হলে বস্তাপ্রতি দেড় কেজির বেশি আদা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সরেজমিন উপজেলার তালোড়া পৌর এলাকার বাজার মহলস্নার বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দীন খন্দকারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তিনি ধান-চালের ব্যবসা করেন। এর পাশাপাশি পরিত্যক্ত একটি চাতাল ভাড়া নিয়ে চার হাজার বস্তায় এই প্রথম আদা চাষ শুরু করেছেন। কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শে নিয়মিত আদা গাছ পরিচর্যা করে আসছেন। তার আশা, এতে তিনি লাভবান হবেন।
আরেক আদা চাষি তালোড়া মন্ডল পাড়ার সেলিম খান বলেন, অনলাইনে বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখে তিনি তার পুকুর পাড়ের চারপাশে দুই হাজার ৫০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি উপজেলা কৃষি অফিস হতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে আদার ক্ষেতের যে অবস্থা, এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে জানান।
উপজেলার জলঙ্গি গ্রামের ধনঞ্জয় দাস, লক্ষ্ণীমন্ডব গ্রামের শহিদুল ইসলাসসহ বেশ কয়েকজন আদাচাষি জানান, ছায়াযুক্ত পতিত জায়গায় আদা চাষ হয় বলে বাড়তি কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। তাই বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। নিয়মিত পরিচর্যা করায় বর্তমানে আদা ক্ষেতের অবস্থা ভালো। এতে তারা লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মামুন হোসেন প্রামাণিক বলেন, বস্তায় আদা চাষে চাষিদের উদ্বুব্ধ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে উপজেলার আদাচাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাজেদুল আলম জানান, 'বাণিজ্যিকভাবে দুপচাঁচিয়ায় এই প্রথম বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। আমাদের থেকে তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ নিচ্ছেন। আমরা চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছি। ছায়াযুক্ত পতিত জায়গায় কম খরচে বস্তায় আদা চাষে একদিকে যেমন চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, অন্যদিকে অনেক চাষি এই পদ্ধতিতে আদা চাষে অনুপ্রাণিত হবেন।