একদফা দাবিকে সমর্থন করে গণহত্যার বিচার, গায়েবি মামলা, গণগ্রেপ্তার এবং নির্যাতন বন্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে 'সরকারবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন। চাঁদপুরে সচেতন আইনজীবী সমাজ, খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ইউপিডিএফ ও নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বিরোধী দলগুলো এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও সাধারণ নাগরিকদের গণহত্যার বিচার, গায়েবি মামলা, গণগ্রেপ্তার এবং নির্যাতন বন্ধে চাঁদপুরে প্রতিবাদ এবং মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা জজ আদালত চত্বরে সচেতন আইনজীবী সমাজের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
সাধারণ ছাত্রদের একদফা আন্দোলনের সঙ্গে একমত পোষণ করে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল বিন বাশার, অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন, সিনিয়র আইনজীবী দুলাল মিয়া পাটওয়ারী ও জাহাঙ্গীর আলম। অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ ফেরদৌস শাহিনের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট আবদুলস্নাহিল বাকীর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন বাবর, অ্যাডভোকেট কোহিনুর রশিদ ও আলম খান মঞ্জু।
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তারা বলেন, 'আমরা এই স্বাধীন দেশে আর গুলি দেখতে চাই না। আমরা আর কোনো হত্যা এবং খুন দেখতে চাই না। আমাদের সন্তানদের বাইরে রেখে আমরাও ঘরে থাকতে পারছি না। বিনা অযুহাতে সন্তানদের আমাদের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করতে দিব না। আমরা আইনজীবী সমাজ সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে প্রস্তুত। এখন থেকে আমরা ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে আছি এবং থাকব। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না।'
এ ছাড়াও আইনীজবীদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম রিপন, জসিম মেহেদী, ছায়েম, মো. কামাল, ইয়াসিন আরাফাত, মো. শামিম, ছাদ্দাম, মাইনুল, জিসান আহমেদ রিজন, সানজিদ, সুমন, মিল্টন ও শামিমসহ প্রায় শতাধিক আইনজীবী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, 'পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী সমাধান'- এই স্স্নোগানকে সামনে রেখে ও চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের একদফা এক দাবির সমর্থন জানিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবিতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
রোববার বেলা ১১টায় উপজেলার খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের কলেজ সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু হয়ে উপজেলা টাউন হল প্রদক্ষিণ করে পরিষদের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় পার্বত্যাঞ্চলে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন, পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার, চলমান অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে সমর্থন ও অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে নানা স্স্নোগান দেন সমর্থকরা। পরে কলেজ সংলগ্ন এলাকার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে অবস্থান নিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সেখানে সমাবেশ করে ইউপিডিএফ।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) উপজেলা শাখার অর্থ সম্পাদক আতুশে মারমার সঞ্চালনায় ও ইউপিডিএফের উপজেলা শাখার সমন্বয়ক ক্যহ্লাচিং মারমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ইউপিডিএফ'র উপজেলা ইউনিটের সংগঠক অংচিং মারমা, পিসিপির সাবেক উপজেলা সভাপতি অংহ্লাচিং মারমা, সাধারণ সম্পাদক অংসালা মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা সভাপতি উজাই রোয়াজা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিংহ্লাঅং মারমা প্রমুখ।
চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সমাবেশে বক্তারা বলেন, 'দেশের সাধারণ মানুষ বর্তমান সরকারের কাছে নিরাপদ নয়। তাই ছাত্র আন্দোলন দমন করতে বর্তমান সরকার পুলিশ, সেনাবাহিনী,র্ যাব সদস্যদের দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা করছে। এ ছাড়া সমতলে বহু আগ থেকেই পার্বত্যাঞ্চলে এমন হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়ে আসছে। যার কোনো বিচার হয়নি। এমন হত্যাকান্ডের পর বর্তমান সরকারের আর এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।'
তাই অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানান বক্তারা। এ ছাড়াও আগামী ৫ আগস্ট সোমবার রোডমার্চ ও ৬ আগস্ট মঙ্গলবার হরতালের ঘোষণা দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে।
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থী হয়রানি বন্ধ ও সারাদেশের রাজপথ থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। গত শনিবার সকালে পৌর শহরের প্রেস ক্লাব মোড়ে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সিপিবি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রুপন কুমার সরকারের সঞ্চালনায় সভাপতি মীর আলজাছ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুরে আলম, যুব ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম, উপজেলা আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি অবনি কান্ত হাজং, সিপিবি উপজেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোরশেদ আলম, সিনিয়র সদস্য সামছুল আলম খান প্রমুখ।